ভারত তার উচ্চাভিলাষী পঞ্চম-প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট, অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট (AMCA) এর উন্নয়ন ও স্থাপনাকে ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি একটি কৌশল তৈরি করছে, যা এই বিমানের উৎপাদন ও ব্যবসায়িক মডেল চূড়ান্ত করবে। প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং-এর নেতৃত্বে এই কমিটিতে রয়েছেন বায়ুসেনার ভাইস চিফ এয়ার মার্শাল এস. পি. ধরকার, প্রতিরক্ষা উৎপাদন সচিব সঞ্জীব কুমার, ডিআরডিও এবং অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (এডিএ) শীর্ষ কর্মকর্তারা। এই কমিটি আগামী মাসে তাদের রিপোর্ট দেবে।
এই প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন পাকিস্তান চিন থেকে 40টি J-35A স্টিলথ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। একই সময়ে, চিন ইতিমধ্যেই তার চেংডু J-20 স্টিলথ ফাইটার জেট স্থাপন করেছে এবং ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রোটোটাইপ নিয়ে কাজ করছে। চিন তার J-20 যুদ্ধবিমান ভারতের সামনে হোতান এবং শিগাৎসের মতো বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন করেছে, যার কারণে ভারত তার বায়ু শক্তি বাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করছে।
AMCA প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করার কৌশল
ভারতে তেজস মার্ক-1এ-এর উৎপাদন বিলম্ব এবং ভারতীয় বায়ুসেনার (IAF) কমতে থাকা স্কোয়াড্রনের পরিপ্রেক্ষিতে, সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব AMCA প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করেছে। কমিটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা, উৎপাদন মডেল উন্নত করা এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।
AMCA উন্নয়নের জন্য 110kN ক্ষমতার দেশীয় ইঞ্জিন তৈরি করা হবে, যাতে বিদেশি কোম্পানির সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। আমেরিকান জেনারেল ইলেকট্রিক, ফ্রেঞ্চ সাফরান এবং ব্রিটিশ রোলস-রয়েস এই ইঞ্জিন প্রকল্পে অংশ নিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবার সেই তালিকায় ঢুকে পড়েছে রাশিয়াও।
ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে
IAF 42.5 স্কোয়াড্রন প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে মাত্র 30টি স্কোয়াড্রন পাওয়া যায়। আগামী 10 বছরে আরও আটটি স্কোয়াড্রন অবসরে যাবে। এমতাবস্থায় বায়ুসেনাকে শক্তিশালী করতে সরকার ৭টি স্কোয়াড্রনের (126 ফাইটার এয়ারক্রাফট) AMCA অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে।
প্রথম দুটি স্কোয়াড্রন GE-F414 (98kN) ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হবে, এবং পরবর্তী পাঁচটি স্কোয়াড্রন 110 kN ক্ষমতার নতুন ইঞ্জিন দ্বারা সজ্জিত হবে৷ এই বিমানগুলি এআই-চালিত ইলেকট্রনিক পাইলট সিস্টেম, নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিক যুদ্ধ ব্যবস্থা এবং উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মতো উন্নত প্রযুক্তিতে সজ্জিত হবে।
আইএএফের জন্য অন্যান্য বিকল্প সমাধান
AMCA সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত, ভারতীয় বায়ুসেনা তার শক্তি বজায় রাখতে 180টি তেজস মার্ক-1A এবং 108টি তেজস মার্ক-2 যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণ করবে। এছাড়াও, 114 4.5-প্রজন্মের মাল্টি-রোল ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট (MRFA) কেনার পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
2035 সালের মধ্যে উৎপাদন লক্ষ্য
AMCA-এর প্রথম প্রোটোটাইপের উন্নয়ন 2035 সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। যাইহোক, সরকার এবং বায়ুসেনা এই সময়সীমা সংক্ষিপ্ত করার এবং দ্রুত উৎপাদন শুরু করার চেষ্টা করছে। এই প্রকল্প সফল হলে, ভারত বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে থাকবে যেখানে দেশীয় পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান থাকবে। ভারতের AMCA প্রকল্প শুধুমাত্র দেশের বায়ু শক্তিকে শক্তিশালী করবে না বরং দেশীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়াবে। নির্ধারিত সময়ের আগে এই প্রকল্প শেষ হলে তা হবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন।