ট্রাম্পের ‘সুরক্ষামূলক’ শুল্কের জবাবে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ ভারতের

ভারত আমেরিকার (Trump) ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির উপর আরোপিত ‘সুরক্ষামূলক’ শুল্কের জবাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্যের উপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক…

India slams Trump tariff

ভারত আমেরিকার (Trump) ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির উপর আরোপিত ‘সুরক্ষামূলক’ শুল্কের জবাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে ৭.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমেরিকান পণ্যের উপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের কঠোর কূটনৈতিক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়, যা আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

ভারতের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে যখন দুই দেশ (Trump) একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (বিটিএ) চূড়ান্ত করার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। ভারতীয় প্রতিনিধি দল এই সপ্তাহে ওয়াশিংটনে আরও আলোচনার জন্য যাচ্ছে, তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে আরোপিত শুল্কের ক্ষত এখনও তাজা।

   

ডব্লিউটিও-তে ভারতের প্রতিশোধমূলক প্রস্তাব

ভারত ডব্লিউটিও-তে জানিয়েছে, আমেরিকার (Trump) সুরক্ষামূলক শুল্ক ভারতীয় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির ৭.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যকে প্রভাবিত করছে, যার ফলে প্রায় ৩.৮২ বিলিয়ন ডলার শুল্ক সংগ্রহ হবে। এর জবাবে ভারত আমেরিকান পণ্যের উপর সমপরিমাণ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে।

ডব্লিউটিও-র নথি অনুসারে, ভারত নির্দিষ্ট আমেরিকান (Trump) পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করার পরিকল্পনা করছে। এই প্রস্তাব ৯ মে, ২০২৫ তারিখে ডব্লিউটিও-তে জমা দেওয়া হয়েছে এবং ৩০ দিন পর, অর্থাৎ ৯ জুন, ২০২৫ থেকে এটি কার্যকর হতে পারে।

ভারত জানিয়েছে, আমেরিকার শুল্ক সাধারণ শুল্ক ও বাণিজ্য চুক্তি (গ্যাট) ১৯৯৪ এবং সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা চুক্তি (এওএস)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভারত আরও বলেছে, আমেরিকা ডব্লিউটিও-র সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা কমিটির কাছে এই শুল্কের বিষয়ে কোনো তথ্য জানায়নি এবং আলোচনার জন্য ভারতের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে।

আমেরিকার শুল্ক নীতি এবং ভারতের প্রতিক্রিয়া

আমেরিকা ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (Trump) প্রথম মেয়াদে ইস্পাতের উপর ২৫% এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ১০% শুল্ক আরোপ করেছিল, জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে। এই বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আমেরিকা এই শুল্ক সংশোধন করে উভয় ধাতুর উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা ১২ মার্চ, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।

সম্প্রতি ট্রাম্প (Trump) প্রশাসন এই শুল্ক ৫০%-এ উন্নীত করেছে, যার ফলে ভারত তার প্রতিশোধমূলক শুল্কের পরিমাণ সংশোধন করে ৩.৮২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। ভারতের আগের প্রস্তাবে এই পরিমাণ ছিল ১.৯১ বিলিয়ন ডলার। ভারত জানিয়েছে, আমেরিকার এই শুল্ক তার রপ্তানি বাণিজ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, এবং এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম লঙ্ঘন করছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনার প্রেক্ষাপট

এই প্রতিশোধমূলক শুল্কের প্রস্তাব এমন সময়ে এসেছে যখন ভারত ও আমেরিকা (Trump) একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করছে, যার প্রথম পর্যায় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়ার কথা। ভারতীয় বাণিজ্য আলোচনা দল, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে, শিগগিরই ওয়াশিংটনে আরও আলোচনার জন্য যাচ্ছে।

ভারত আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। তবে, আমেরিকার শুল্ক নীতি এই আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে। ভারত ইতিমধ্যে আমেরিকার ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানির উপর শুল্ক ৫% থেকে ৩০%-এর মধ্যে কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তবে এটি আমেরিকার পক্ষ থেকে পারস্পরিক শুল্ক হ্রাসের উপর নির্ভরশীল।

Advertisements

আগের প্রতিশোধ এবং বর্তমান অবস্থান

এটি প্রথমবার নয় যে ভারত আমেরিকার (Trump) শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে ভারত আমেরিকার ২৮টি পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছিল, যার মধ্যে ছিল বাদাম, আখরোট এবং অন্যান্য পণ্য। এছাড়া, ভারত ডব্লিউটিও-তে আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল।

এই বছরের এপ্রিলে ভারত আমেরিকার সঙ্গে সুরক্ষামূলক চুক্তির আওতায় আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু আমেরিকা জানিয়েছে, এই শুল্ক জাতীয় নিরাপত্তার কারণে আরোপিত এবং এটি সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নয়। ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, আমেরিকার শুল্ক ডব্লিউটিও নিয়মের লঙ্ঘন।

ডিজিটাল অর্থনীতিতে নতুন ইতিহাস গড়ছে ভারত, IMF-এর স্বীকৃতি

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

সামাজিক মাধ্যমে এই পদক্ষেপ নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একাধিক ব্যবহারকারী ভারতের এই পদক্ষেপকে ‘কঠোর এবং কৌশলগত’ বলে অভিহিত করেছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ভারত বলছে, ‘তুমি শুল্ক আরোপ করলে, আমরাও করব!’ এটি কেবল প্রতিক্রিয়া নয়, একটি বার্তা।”

আরেকজন লিখেছেন, “৭.৬ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক ভারতের শক্তিশালী অবস্থানের প্রতীক।” তবে, কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই শুল্ক যুদ্ধ দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে।

ভারতের এই প্রতিশোধমূলক শুল্কের প্রস্তাব আমেরিকার (Trump) সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। আমেরিকার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম শুল্ক ভারতের রপ্তানি বাণিজ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, এবং ভারত এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আলোচনার মধ্যে এই পদক্ষেপ ভারতের কূটনৈতিক কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী দিনে এই শুল্ক যুদ্ধ কীভাবে দুই দেশের সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।