Tuberculosis cases in India 2024: ভারতে টিউবারকুলোসিস (টিবি) নির্মূলের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের দিকে এগোচ্ছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেল সংসদে জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে দেশে ২১.৬৯ লক্ষ টিবি রোগীর সন্ধান মিলেছে।
মহামারীর কারণে ২০২০ সালে টিবি রোগের সন্ধানে কিছুটা ভাটা পড়লেও, সম্প্রতি এই রোগ নির্ণয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। পটেল জানান, ২০২০ সালে ১৮.০৫ লক্ষ টিবি রোগীর সন্ধান পাওয়া গেলেও, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ২৫.৫২ লক্ষে পৌঁছেছে।
টিবি নির্মূলের লক্ষ্য ২০২৫
ভারত সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে টিবি নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করছে, যা বিশ্বব্যাপী ২০৩০ সালের লক্ষ্য থেকে পাঁচ বছর এগিয়ে। এই মর্মে জাতীয় টিবি নির্মূল কর্মসূচি (এনটিইপি) এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পটেল বলেন, “ভারতে টিবি রোগের প্রকোপ এবং মৃত্যুহারের উল্লেখযোগ্য হ্রাস ঘটেছে। ২০১৫ সালে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় ২৩৭ জন টিবি রোগীর সন্ধান মিললেও, ২০২৩ সালে তা কমে ১৯৫ জনে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে টিবি-জনিত মৃত্যু ২০১৫ সালের ২৮ জন থেকে ২০২৩ সালে ২২ জনে নেমে এসেছে।”
জাতীয় টিবি নির্মূল কর্মসূচির (NTEP) উদ্যোগ
অনুপ্রিয়া পটেল সংসদে আরও জানান, উচ্চ টিবি সংক্রমণ এলাকাগুলিতে বিশেষ লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ এবং রোগ নির্ণয়ের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিছু মূল উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে:
- ঝুঁকিপূর্ণ ও কো-মর্বিড জনসংখ্যার মধ্যে সক্রিয়ভাবে টিবি রোগী সন্ধান করা।
- আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের সঙ্গে টিবি নির্ণয় এবং চিকিৎসা পরিষেবার সংযুক্তি।
- টিবি রোগীর নথিভুক্তি ও ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রণোদনা প্রদান।
- সাব-ডিস্ট্রিক্ট স্তরে মলিকুলার ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি সম্প্রসারণ।
- নিক্ষয় পোষণ যোজনা-র আওতায় টিবি রোগীদের পুষ্টি সহায়তার বিস্তৃতি।
টিবি নির্মূলে বিশেষ অভিযান
সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিবি রোগী শনাক্তে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল এবং শহুরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সক্রিয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে রোগীর সংখ্যা দ্রুত চিহ্নিত হচ্ছে।
নিক্ষয় পোর্টালের মাধ্যমে টিবি রোগী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে পুষ্টি এবং চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই পোর্টালের সাহায্যে দেশের প্রতিটি টিবি রোগীর একটি ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হচ্ছে।
বেসরকারি খাতের ভূমিকা
টিবি নির্মূলের লক্ষ্যে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের সহযোগিতা বড় ভূমিকা পালন করছে। রোগীর চিকিৎসা এবং নথিভুক্তিতে বেসরকারি চিকিৎসকদের উৎসাহিত করতে সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে।
চিকিৎসার সহজলভ্যতা এবং চ্যালেঞ্জ
দেশজুড়ে টিবি চিকিৎসার সুবিধা সহজলভ্য করতে সাব-ডিস্ট্রিক্ট স্তরে মলিকুলার ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে, এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার অপ্রতুলতা।
রোগীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব।
দারিদ্র্যের কারণে চিকিৎসার ধারাবাহিকতায় ব্যাঘাত।
টিবি নির্মূলে সচেতনতা বৃদ্ধি
সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও টিবি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে। স্কুল-কলেজ এবং জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ কর্মসূচি চালিয়ে রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে জানানো হচ্ছে।
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে
ভারত সরকারের উদ্যোগ এবং জনগণের সহযোগিতা যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে টিবি নির্মূলের লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। এটি শুধু দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি নয়, বরং বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উদ্যোগে ভারতের নেতৃত্বের পরিচয়ও বহন করবে।
টিবি রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে সরকারের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে, এই যুদ্ধে জয়ী হতে রোগীর সচেতনতা, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগ অপরিহার্য।