চন্দ্রযান-৩-এর পর এবার মোদীর নেতৃত্বে চাঁদে যাবে নভোশ্চররা

india-manned-lunar-mission-2040-under-modi-isro

নয়াদিল্লি: ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত ২০৪০ সালের মধ্যে প্রথম মানববাহী চন্দ্র মিশন সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র প্রধান এস সোমনাথ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, ভারত শুধু চাঁদে মানুষ পাঠানোর ক্ষমতা অর্জন করবে না, বরং তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তিও তৈরি করবে।

এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা দেশের তরুণদের জন্য এক নতুন স্বপ্নের দিগন্ত খুলে দেবে।ইসরোর এই ঘোষণা এসেছে চন্দ্রযান-৩-এর অভূতপূর্ব সাফল্যের পর। ২০২৩ সালে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে, যা ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে ল্যান্ডার পাঠানোর কৃতিত্ব এনে দেয়।

পেটিএমের পুনর্গঠন, ফাইন্যান্স ও টেক সংস্থায় স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি

এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ইসরো এখন মানব মিশনের দিকে এগোচ্ছে। সোমনাথ জানিয়েছেন, “আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য প্রস্তুত থাকব। এটি শুধু একটি মিশন নয়, এটি ভারতের প্রযুক্তিগত শক্তি এবং বিশ্ব মঞ্চে আমাদের স্থান প্রতিষ্ঠার প্রমাণ।” তিনি আরও বলেন, এই মিশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, যেমন রকেট, স্পেসক্রাফট এবং মানব জীবন রক্ষার ব্যবস্থা, ইতিমধ্যেই উন্নয়নের পথে রয়েছে।

এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হল ভারতীয় নভোচারীদের চাঁদে পাঠানো এবং তাদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা। ইসরো ইতিমধ্যে গগনযান মিশনের মাধ্যমে মানব মহাকাশ অভিযানের দিকে পা বাড়িয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে গগনযান মিশন ভারতের প্রথম মানববাহী মহাকাশ অভিযান হিসেবে তিনজন নভোচারীকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠাবে।

এই মিশন সফল হলে, চন্দ্র মিশনের জন্য প্রযুক্তিগত ভিত্তি আরও মজবুত হবে। ইসরোর পরিকল্পনায় রয়েছে একটি শক্তিশালী লঞ্চ ভেহিকল তৈরি, যা মানুষকে চাঁদে নিয়ে যেতে পারে। এলভিএম-৩ রকেট, যা চন্দ্রযান মিশনে ব্যবহৃত হয়েছিল, তার আরও উন্নত সংস্করণ এই মিশনে ব্যবহার হতে পারে।

Advertisements

প্রধানমন্ত্রী মোদি এই লক্ষ্যকে ‘অমৃতকাল’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “ভারতের তরুণরা শুধু পৃথিবীতে নয়, মহাকাশেও তাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। আমরা চাঁদে যাব, এবং আমাদের নভোচারীরা ভারতের পতাকা সেখানে উড়িয়ে ফিরে আসবে।” এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং ভারতের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি প্রেরণা।

ইসরোর প্রধান জানিয়েছেন, এই মিশনের জন্য নভোচারী প্রশিক্ষণ, মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারত ইতিমধ্যে নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা করছে। এই মিশনের জন্য ইসরোর পরিকল্পনা বেশ কৌশলগত। প্রথম ধাপে, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারত নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন ‘ভারতীয় মহাকাশ স্টেশন’ চালু করবে।

এই স্টেশন চন্দ্র মিশনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। মহাকাশ স্টেশন থেকে নভোচারীরা চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারবেন। এছাড়া, ইসরো চাঁদে একটি স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে, যা ভবিষ্যতে চন্দ্র পৃষ্ঠে দীর্ঘমেয়াদী মানব উপস্থিতির পথ প্রশস্ত করবে। সোমনাথ জানিয়েছেন, “আমরা শুধু চাঁদে যাচ্ছি না, আমরা সেখানে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

এই মিশনের পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। মানব মহাকাশ অভিযানে জীবন রক্ষার ব্যবস্থা, রেডিয়েশন সুরক্ষা এবং দীর্ঘমেয়াদী মিশনের জন্য খাদ্য ও অক্সিজেন সরবরাহের মতো বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। ইসরো ইতিমধ্যে এই ক্ষেত্রে গবেষণা শুরু করেছে।

বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দফতরে একটি উন্নত সিমুলেশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে নভোচারীরা চন্দ্র পরিবেশের অনুকরণে প্রশিক্ষণ নেবেন। এছাড়া, মহাকাশে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও গবেষণা চলছে।