যুদ্ধবিমান ইঞ্জিনে ৬৫,৪০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ, আত্মনির্ভরতার পথে ভারত

India Jet Engine Self-Reliance

নয়াদিল্লি: ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি এখন এক ঐতিহাসিক মোড়ে দাঁড়িয়ে। ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রায় ৬৫,৪০০ কোটি টাকা (৭.৪৪ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র৷ যার লক্ষ্য, পরবর্তী প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলির জন্য সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরি ও উৎপাদন। এই প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিক বিনিয়োগ নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারতের প্রতিরক্ষা নীতির অন্যতম ভিত্তিপ্রস্তর—বিশেষত এমন এক প্রযুক্তিক্ষেত্রে, যেখানে এতদিন বিদেশি নির্ভরতা ছিল অনিবার্য।

Advertisements

গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টের (GTRE) ডিরেক্টর এস. ভি. রমনা মূর্তি জানিয়েছেন, আগামী দশকে ভারতের যুদ্ধবিমান প্রকল্পগুলির জন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ১,১০০টি ইঞ্জিন। তাঁর কথায়, “দেশীয় যুদ্ধবিমান ইঞ্জিন তৈরির জন্য এখনই মিশন মোডে কাজ শুরু করতে হবে। উচ্চ-উচ্চতার পরীক্ষাকেন্দ্র এবং একটি পরিপূর্ণ শিল্প-পরিকাঠামো গড়ে তোলা ছাড়া সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।”

দেশীয় উন্নয়নের রূপরেখা: তেজস থেকে AMCA

এই উচ্চাভিলাষী কর্মসূচির আওতায় রয়েছে ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধবিমান প্রকল্প—

HAL তেজস এমকে-২ (Medium Weight Fighter – MWF): হালকা যুদ্ধবিমান তেজসের উন্নত সংস্করণ, যা পর্যায়ক্রমে জাগুয়ার, মিরাজ ২০০০ ও মিগ-২৯-এর বহর প্রতিস্থাপন করবে।

অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (AMCA): ভারতের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের, দ্বি-ইঞ্জিন বিশিষ্ট স্টেলথ ফাইটার, যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক বিপ্লব ঘটাবে।

তেজস এমকে-১এ: বর্তমানে উৎপাদনপর্বে থাকা হালকা যুদ্ধবিমানের আপগ্রেড সংস্করণ।

Advertisements

দ্বিমুখী কৌশল: দেশীয় প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব India Jet Engine Self-Reliance

ভারতের পরিকল্পনা সুস্পষ্ট—দেশীয় উদ্ভাবন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দুই-ই সমান গুরুত্ব পাবে।
একদিকে, আমেরিকার General Electric (GE)-এর সঙ্গে যৌথভাবে F414 ইঞ্জিন-এর সহ-উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, যা তেজস এমকে-২-কে শক্তি জোগাবে। এই প্রকল্পে থাকবে বৃহৎ প্রযুক্তি হস্তান্তর (Technology Transfer), যা ভবিষ্যতে ভারতের নিজস্ব ইঞ্জিন নকশা ও নির্মাণের সক্ষমতাকে মজবুত করবে।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের Safran সংস্থার সঙ্গে মিলে ডিআরডিও কাজ করছে একটি ১১০ কিলোনিউটন শ্রেণির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন তৈরিতে, যা ভবিষ্যতের AMCA প্রকল্পের প্রাণ হবে। এই ইঞ্জিনে দেশীয় উপাদানের হার থাকবে অনেক বেশি, যা ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার এক বড় মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা স্বনির্ভরতার পথে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ

এই প্রকল্পের সাফল্য ভারতকে এমন এক কৌশলগত উচ্চতায় পৌঁছে দিতে পারে, যেখানে বর্তমানে কেবল হাতে গোনা কয়েকটি দেশ, যেমন আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া ও ব্রিটেন-অবস্থান করছে। দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বাজেট ঘাটতিতে থমকে থাকা ‘কাবেরী ইঞ্জিন’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার ভারত চাইছে এক নতুন সূচনা।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধুমাত্র ইঞ্জিন উন্নয়নের উদ্যোগ নয়, এটি ভারতের সামরিক সার্বভৌমত্বের ঘোষণা। দেশীয়ভাবে তৈরি ইঞ্জিন অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে স্বাধীন জ্বালানি, স্বাধীন প্রযুক্তি, আর স্বাধীন কৌশলগত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা।

অর্থাৎ, এই বিনিয়োগ শুধু ভবিষ্যতের যুদ্ধবিমান নয়, বরং আত্মনির্ভর ভারতের শক্তিশালী আকাশসীমা গঠনের প্রতিশ্রুতি।