নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর: ভারতের প্রতিরক্ষা রফতানির ইতিহাসে একটা সোনালি অধ্যায় যোগ হতে চলেছে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল চুক্তি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, শুধু রাশিয়ার চূড়ান্ত স্বাক্ষরের অপেক্ষায়। ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত মিসাইলের রফতানি ইন্দোনেশিয়াকে দ্বিতীয় এশিয়ান দেশ করে তুলবে, ফিলিপাইনসের পর।
অপারেশন সিঁদুরে এর লাইভ অ্যাকশন দেখে থমকে গেছে বিশ্বের অনেক দেশ ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো এখন লাইনে দাঁড়িয়েছে। রক্ষণমন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি বলেছেন, “আমরা দুটি বন্ধু দেশের সঙ্গে ৪,০০০ কোটি টাকার মিসাইল চুক্তি সই করেছি, এবং আরও আসছে।” এই খবর ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগতভাবেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে নতুন আকার দেবে।
Kolkata24x7 | কলকাতা 24×7 নিউজ, বাংলা ব্রেকিং নিউজ
ব্রহ্মোসের এই সাফল্যের পিছনে অপারেশন সিঁদুরের ভূমিকা অসাধারণ। মে ২০২৫-এ ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় এই মিসাইল তার ম্যাক ২.৮ থেকে ৩.০ গতিতে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ২৯০ কিলোমিটার রেঞ্জের এই অস্ত্রটি স্থল, আকাশ বা সমুদ্র থেকে ছোড়া যায়, এবং তার নির্ভুলতা অতুলনীয়। ডিআরডিও এবং রাশিয়ার এনপিও ম্যাশিনোস্ত্রোয়েনিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মোস এখন ভারতের গর্ব।
ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানকার্তায় ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি লিখে কেনার আনুষ্ঠানিক অভিপ্রায় জানিয়েছে। জানুয়ারি ২০২৫-এ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তোর ভারত সফরের সময় এই আলোচনা গতি পায়। তিনি গণতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হিসেবে এসে ব্রহ্মোসের ক্ষমতা দেখে মুগ্ধ হন। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মুহাম্মদ আলী জানুয়ারিতে ব্রহ্মোস এয়ারোস্পেসের হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন করে সিইও জৈতীর্থ আর জোশির সঙ্গে আলোচনা করেন। “এই অস্ত্রের ক্ষমতা অসাধারণ, আমরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে চাই,” বলেছিলেন আলী।
এই চুক্তির মূলে ইন্দোনেশিয়ার কৌশলগত চাহিদা। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসনের মুখোমুখি এই দ্বীপরাষ্ট্র তার নৌ-সীমান্ত রক্ষায় শক্তিশালী হতে চায়। ব্রহ্মোস তার উপকূলীয় প্রতিরক্ষাকে নতুন মাত্রা দেবে। চুক্তির বিশেষত্ব, প্রযুক্তি স্থানান্তর (টিওটি) এর অংশ রয়েছে, যাতে ইন্দোনেশিয়া ভবিষ্যতে কিছু কম্পোনেন্ট স্থানীয়ভাবে তৈরি করতে পারবে।
এটা ভারতের আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ যে আমরা এখন শুধু বিক্রেতা নই, অংশীদারও। ২০২৩ সালে ফিলিপাইনসের সঙ্গে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়েছে, যাতে তিনটি ব্যাটারি সরবরাহ করা হয়েছে। সেই চুক্তির সাফল্য দেখে ইন্দোনেশিয়া এগিয়ে এসেছে। রক্ষণমন্ত্রক বলেছেন, “এটা আমাদের প্রতিরক্ষা রফতানির মাইলফলক। ২০২৫ সালে আমরা ৪,০০০ কোটি টাকার চুক্তি সই করেছি, এবং আরও আসছে।”





