ভারত সরকার চীন (domestic-industry) এবং তাইওয়ান থেকে প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিন আমদানির উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে, যার লক্ষ্য দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই মেশিনগুলি চীন এবং তাইওয়ান থেকে ভারতে ডাম্পিং মূল্যে রপ্তানি করা হচ্ছিল, যার ফলে দেশীয় শিল্পের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে যে, এই ডাম্পিং (domestic-industry) আমদানির কারণে দেশীয় শিল্পে “উল্লেখযোগ্য ক্ষতি” হয়েছে। এই পটভূমিতে, অর্থ মন্ত্রণালয় চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা এই পণ্যের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছে, যাতে দেশীয় শিল্পের ক্ষতি দূর করা যায়। এই শুল্ক পণ্যের সিআইএফ (কস্ট, ইন্স্যুরেন্স এবং ফ্রেইট) মূল্যের ২৭ শতাংশ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত, যা উৎপত্তি দেশ, রপ্তানি দেশ এবং উৎপাদকের উপর নির্ভর করে।
এই অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে, যদি না এর আগে তা প্রত্যাহার, সংশোধন বা বাতিল করা হয়। শুল্ক ভারতীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। সহজভাবে বলতে গেলে, অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক হলো আমদানি করা পণ্যের উপর আরোপিত কর, যা রপ্তানি মূল্য এবং স্বাভাবিক মূল্যের মধ্যে পার্থক্য পূরণ করে, যদি ডাম্পিং আমদানিকারক দেশের প্রতিযোগী পণ্য উৎপাদকদের ক্ষতি করে।
অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের পটভূমি
অ্যান্টি-ডাম্পিং (domestic-industry) শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ট্রেড রেমেডিজ (ডিজিটিআর)-এর তদন্তের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। ডিজিটিআর-এর তদন্তে দেখা গেছে যে, চীন এবং তাইওয়ান থেকে প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিনগুলি ভারতে তাদের স্বাভাবিক বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে রপ্তানি করা হচ্ছিল।
এই ডাম্পিংয়ের ফলে ভারতের দেশীয় প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিন উৎপাদকরা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, যার ফলে তাদের উৎপাদন, বিক্রি এবং লাভের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তদন্তে আরও প্রকাশ পেয়েছে যে, এই আমদানির কারণে দেশীয় শিল্পের কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশীয় শিল্পের ক্ষতি
প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিন শিল্প ভারতের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিল্প প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনের জন্য ইনজেকশন মোল্ডিং মেশিন, এক্সট্রুশন মেশিন এবং ব্লো মোল্ডিং মেশিনের মতো সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যা প্যাকেজিং, স্বয়ংচালিত, নির্মাণ এবং ভোগ্যপণ্য শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
তবে, চীন এবং তাইওয়ান থেকে স্বল্প মূল্যে আমদানির কারণে দেশীয় উৎপাদকরা বাজারে টিকতে পারছিলেন না। ডিজিটিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ডাম্পিংয়ের ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলোর বাজার হিস্যা হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত রয়েছে।
অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের হার
অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক পণ্যের উৎপত্তি দেশ, রপ্তানিকারক এবং উৎপাদকের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিনের উপর ২৭ শতাংশ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রেও একই হারে শুল্ক প্রযোজ্য। এই শুল্ক পণ্যের সিআইএফ মূল্যের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে এবং ভারতীয় মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এই শুল্ক পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে, যদি না এর আগে তা সংশোধন বা বাতিল করা হয়।
দেশীয় শিল্পের জন্য তাৎপর্য
এই অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের (domestic-industry) ফলে ভারতের প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিন শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতীয় প্লাস্টিক অ্যান্ড লিনোলিয়াম এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল (প্লেক্সকনসিল)-এর চেয়ারম্যান অরবিন্দ গোয়েঙ্কা বলেছেন, “এই পদক্ষেপ দেশীয় উৎপাদকদের জন্য একটি ন্যায্য বাজার পরিবেশ তৈরি করবে। আমরা এখন বিনিয়োগ বাড়াতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারব।” তিনি আরও বলেন, এই শুল্ক দেশীয় শিল্পকে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ দেবে।
রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক মহল স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপি নেতা স্মৃতি ইরানি এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, “এটি মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করা আমাদের অগ্রাধিকার।” তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই শুল্কের ফলে চীন ও তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে অতীতে চীন এই ধরনের শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগ করেছে।
মনোজিৎ-এর বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান! সেই রাগেই গণধর্ষণ? কসবা-কাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য
অর্থনৈতিক প্রভাব
এই শুল্ক দেশীয় (domestic-industry) শিল্পের জন্য স্বস্তি আনলেও, কিছু আমদানিকারক এবং প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদকদের জন্য উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এই শুল্ক দেশীয় উৎপাদকদের জন্য ইতিবাচক হলেও, আমদানিনির্ভর কোম্পানিগুলোর জন্য স্বল্পমেয়াদে চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।” তবে, তিনি এও বলেন যে, দীর্ঘমেয়াদে এটি দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াবে।
চীন ও তাইওয়ান থেকে প্লাস্টিক প্রসেসিং মেশিনের উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ ভারতের দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেশীয় উৎপাদকদের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বাড়াবে।
তবে, এই শুল্কের ফলে (make-in-india) আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক এবং আমদানিনির্ভর শিল্পের উপর কী প্রভাব পড়ে, তা আগামী দিনে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক কার্যকর থাকবে, এবং এটি দেশীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।