Hepatitis B: দেশে ‘হেপাটাইটিস বি’ প্রতিষেধকের হাহাকার, উদ্বিগ্ন কেন্দ্র

হেপাটাইটিস (Hepatitis B) বি প্রতিষেধকের অভাব বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতে। গত ছ’মাস ধরে বাজারে এই প্রতিষেধক অনুপস্থিত, যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে…

hepatitis B is missing in several hospitals in India, sparks controversy

হেপাটাইটিস (Hepatitis B) বি প্রতিষেধকের অভাব বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতে। গত ছ’মাস ধরে বাজারে এই প্রতিষেধক অনুপস্থিত, যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি উৎপাদন বন্ধ রাখায় সমস্যাটি জটিল আকার ধারণ করেছে। অথচ এ বিষয়ে সরকারের তরফে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। 

প্রকাশিত হল আইসিএসআই সিএসইইটি নভেম্বর ২০২৪ ফলাফল, কীভাবে চেক করবেন জানেন?

   

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নবজাতকদের জন্য সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় হেপাটাইটিস বি প্রতিষেধক সরবরাহে আপাতত কোনো সমস্যা নেই। তবে সমস্যার মূল কেন্দ্র প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য। এই বয়সীদের প্রতিষেধক বাজার থেকে কিনতে হয়। কিন্তু এখন সেই প্রতিষেধক একেবারেই অনুপস্থিত।

ভারতে হেপাটাইটিস বি প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী তিন-চারটি সংস্থা রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্থা গত কয়েক মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। চিকিৎসকদের মতে, প্রস্তুতকারকদের দাবি অনুযায়ী, এই প্রতিষেধক থেকে আর্থিক লাভ না হওয়ায় তারা উৎপাদন বন্ধ করেছে।

একজন চিকিৎসক বলেন, “গত জুন মাস থেকেই প্রতিষেধকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু নভেম্বর মাসেও উৎপাদন শুরু হয়নি। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের সমস্যা চরমে পৌঁছেছে।”

চিকিৎসকরা আরও জানান, যাঁরা ইতিমধ্যেই একটি বা দু’টি ডোজ নিয়েছেন, তাঁরাও সমস্যায় পড়েছেন। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে পূর্ণ ডোজ নেওয়া জরুরি। কিন্তু প্রতিষেধকের অভাবে অসম্পূর্ণ ডোজপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংক্রমণের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। 

দূষণে ঢাকা দিল্লির ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ পরিস্থিতি এড়াতে জারি আট দফা বিধিনিষেধ

কলকাতার এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, “প্রথম ডোজের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরবর্তী ডোজ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষেধকের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।”

হেপাটাইটিস বি একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত লিভার রোগ। এটি রক্ত এবং শরীরের তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। ভারতে এর প্রাদুর্ভাব যথেষ্ট বেশি। সঠিক সময়ে প্রতিষেধক নিলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিষেধকের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী এবং আক্রান্তদের সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস বি নির্মূলের লক্ষ্য রয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে উৎপাদন আবার শুরু করতে বাধ্য করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সরকারের তরফে আর্থিক মদত দেওয়া যেতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচিত সরাসরি উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা। প্রতিষেধক সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। বিদেশি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিষেধক আমদানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ এবং এর প্রতিরোধ নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। মানুষকে জানাতে হবে কীভাবে এই রোগ ছড়ায় এবং প্রতিষেধক নেওয়ার উপকারিতা কশুধু নবজাতকদের জন্য নয়, ১২ বছরের বেশি বয়সীদের জন্যও সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।

একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচিত এই সমস্যা নিয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া। প্রতিষেধকের সহজলভ্যতা নিশ্চিত না করলে হেপাটাইটিস বি নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।”

আরও এক চিকিৎসক বলেন, “প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত। প্রয়োজনে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের উৎপাদন চালু রাখতে বাধ্য করা যেতে পারে।”

র‌্যাগিংয়ের দায়ে তেলেঙ্গানায় চার মেডিকেল পড়ুয়া সাসপেন্ড

গত ছ’মাস ধরে সমস্যাটি স্পষ্ট হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের এই উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

বর্তমান পরিস্থিতি হেপাটাইটিস বি সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি বড় সংকট তৈরি করেছে। প্রতিষেধকের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি সরকার এবং প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি একযোগে উদ্যোগ নেয়, তবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

হেপাটাইটিস বি নির্মূলের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রতিষেধকের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। যদি এই সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে তা দেশের জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।