আর মাত্র কয়েকদিন, ডিসেম্বরেই হাইড্রোজেন ট্রেন যাত্রা শুরু করছে ভারতে

ভারতের রেল পরিষেবা (Indian railway) নতুন প্রযুক্তির দিশায় আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে। ডিসেম্বরে প্রথমবারের জন্য হাইড্রোজেনচালিত (Hydrogen train) ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হতে চলেছে।…

Indian Railways to test first Hydrogen train next month.

short-samachar

ভারতের রেল পরিষেবা (Indian railway) নতুন প্রযুক্তির দিশায় আরও এক ধাপ এগোতে চলেছে। ডিসেম্বরে প্রথমবারের জন্য হাইড্রোজেনচালিত (Hydrogen train) ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হতে চলেছে। এই পরীক্ষামূলক যাত্রাটি হবে হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত (Jind-Sonipat) রুটে, যা প্রায় ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ। পরিবেশবান্ধব এবং শক্তি সাশ্রয়ী এই উদ্যোগ দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

   

নাইজেরিয়ায় সফল সফর শেষে জি-২০-তে যোগ দিতে ব্রাজিলে মোদী

হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন (Hydrogen train) একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, যা কার্বন নিঃসরণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ট্রেনের ইঞ্জিনে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, যার ফলে ট্রেন চলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি তৈরি হয়। এই প্রক্রিয়ায় কেবল পানি উৎপন্ন হয়, যা পরিবেশের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।

রেল মন্ত্রকের মতে, ডিজেলচালিত ট্রেনগুলির পরিবর্তে এই ধরনের ট্রেন ব্যবহার করলে ভারতের রেল পরিষেবা আরও পরিবেশবান্ধব হবে। এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির “নেট জিরো কার্বন নিঃসরণ” লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

হরিয়ানার জিন্দ এবং সোনিপত রুট পরীক্ষামূলক যাত্রার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। রেলওয়ের মতে, এই রুটটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং কম ব্যস্ত, ফলে পরীক্ষামূলক যাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা ছোট রুটে পরীক্ষা করছি, যাতে প্রযুক্তির কার্যকারিতা এবং যাত্রী নিরাপত্তা যাচাই করা যায়। সফল পরীক্ষার পরে আমরা এটি আরও বড় রুটে প্রয়োগ করব।”

হাইড্রোজেনচালিত ট্রেনের ইঞ্জিনটি “ফুয়েল সেল” প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই ফুয়েল সেলে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের মিশ্রণ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

হরিয়ানায় নতুন ট্রেন পরিষেবা,৮টি নতুন স্টেশন ১৫,০০০ কোটির প্রকল্প অনুমোদিত

এই ধরনের ট্রেন ডিজেলচালিত ট্রেনগুলির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। ডিজেল ইঞ্জিনে যে ধোঁয়া এবং ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়, তা সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যায় এই প্রযুক্তিতে।

ভারতের রেল পরিষেবা প্রতি বছর লক্ষাধিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে, যা পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন ব্যবহার শুরু হলে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ট্রেনের ব্যবহার শুধু পরিবেশ রক্ষা করতেই সাহায্য করবে না, বরং শক্তি খরচও কমাবে। হাইড্রোজেন জ্বালানির প্রাপ্যতা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে এর উৎপাদন ভবিষ্যতে এটির খরচ আরও কমাবে।

ভারতীয় রেলওয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের পরিষেবায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। বৈদ্যুতিক রেল পরিষেবার সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে আধুনিক কোচ এবং স্মার্ট স্টেশন, প্রতিটি ক্ষেত্রে রেলের আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

হাইড্রোজেনচালিত ট্রেনের ব্যবহার এই আধুনিকীকরণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব পরিবহনের দিকে ঝোঁক বাড়ার মধ্যে এই উদ্যোগ ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নকেও চিহ্নিত করবে।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যেই হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন চালু করেছে। জার্মানির কোরাডিয়া আইলিন্ট প্রথম হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন হিসেবে পরিচিত। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, এবং চীনও এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

ভারত এই প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিক থেকে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উদ্যোগ ভারতকে বিশ্বের পরিবেশবান্ধব দেশগুলির সারিতে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

সংঘর্ষে জ্বলন্ত মনিপুরে যাচ্ছে এনআইএ, বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন চালুর পথে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও, সেগুলি মোকাবিলা করার জন্য রেল মন্ত্রক ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছে।ভারতে এখনও হাইড্রোজেন উৎপাদন পর্যাপ্ত নয়। তবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। হাইড্রোজেনচালিত ট্রেনের প্রাথমিক খরচ বেশি। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি কার্যকর এবং লাভজনক হয়ে উঠবে এই নতুন প্রযুক্তি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে রেল কর্মীদের।

পরীক্ষামূলক যাত্রা সফল হলে, ভারতীয় রেলওয়ে আরও রুটে হাইড্রোজেনচালিত ট্রেন চালু করার পরিকল্পনা করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় রেলকে কার্বন-মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই উদ্যোগ সেই লক্ষ্যেরই অংশ।

ডিসেম্বরে হরিয়ানার জিন্দ-সোনিপত রুটে হাইড্রোজেনচালিত ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা শুধুমাত্র ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের একটি পদক্ষেপ নয়, এটি একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের সূচনাও।

এই পরীক্ষামূলক উদ্যোগ সফল হলে, তা ভবিষ্যতে রেলের পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলিকে আরও শক্তিশালী করবে। পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে শক্তি সাশ্রয়ের লক্ষ্যেও এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। ভারতের রেল পরিষেবা এই উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিবেশ সচেতন দেশের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে।