স্বাধীনতা দিবসে মোদির বড় ঘোষণা, আয়কর ছাড় দ্বিগুণেরও বেশি

৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার দেশবাসীকে বড় কর উপহার দিলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, আয়কর সংস্কারের (Tax Relief) ফলে এবার ব্যক্তিগত আয়কর-মুক্ত আয়ের…

PM Modi

৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার দেশবাসীকে বড় কর উপহার দিলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, আয়কর সংস্কারের (Tax Relief) ফলে এবার ব্যক্তিগত আয়কর-মুক্ত আয়ের সীমা বেড়ে বছরে ১২ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। অর্থাৎ, একজন বেতনভোগী নাগরিক যদি বছরে ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন (স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশনসহ), তবে তাঁর কোনও আয়কর দিতে হবে না।

মোদি বলেন, “আমরা নাগরিকদের জীবন সহজ করার জন্য কর ব্যবস্থা বদলে দিয়েছি। আয়কর ফেরতের গতি বৃদ্ধি, মুখোমুখি ছাড়া মূল্যায়ন (Faceless Assessment), এবং আয়কর-মুক্ত সীমা ১২ লক্ষ টাকা করা—এসবই কর সংস্কারের সুফল। এক সময় কেউ ভাবেনি যে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় পাওয়া সম্ভব। দেশের সক্ষমতা যত বাড়বে, নাগরিকরাও তত বেশি উপকৃত হবেন।”

   

বাজেট ২০২৫-২৬-এ বড় পরিবর্তন:
২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকার আয়করের রিবেট সীমা ৭ লক্ষ টাকা থেকে সরাসরি ১২ লক্ষ টাকায় উন্নীত করে। স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন হিসেব করলে কার্যত এই সীমা দাঁড়ায় ১২.৭৫ লক্ষ টাকা। এর ফলে, মধ্যবিত্ত বেতনভোগীদের উপর করের চাপ অনেকটাই কমবে।

অর্থ বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ শুধু সাধারণ মানুষের খরচযোগ্য আয় বাড়াবে না, বরং ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আয়কর ফেরত দেওয়ার গতি বৃদ্ধি:
গত এক দশকে আয়কর ফেরত দেওয়ার সময়সীমায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে ফেরত পেতে গড়ে ৯৩ দিন লাগত, ২০২৪ সালে সেটি নেমে এসেছে মাত্র ১৭ দিনে। অর্থাৎ, ৮১ শতাংশ দ্রুততর হয়েছে প্রক্রিয়া।

অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে আয়কর ফেরতের মোট অর্থমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০১৩ সালের তুলনায় ৪৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি। একই সময়ে মোট কর সংগ্রহ বেড়েছে ২৭৪ শতাংশ।

ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের সুফল:
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে চালু হওয়া ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট ব্যবস্থায় করদাতাদের আর আয়কর দফতরের কোনও অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করতে হয় না।
এখন একটি কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক সিস্টেম ঝুঁকির মাত্রা ও তথ্যের অসঙ্গতি দেখে ট্যাক্স রিটার্ন বেছে নেয় এবং দেশের যে কোনও শহরের আয়কর কর্মকর্তাদের কাছে এলোমেলোভাবে পাঠিয়ে দেয়। এর ফলে কর মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বেড়েছে, এবং হয়রানির সুযোগ কমেছে।

নাগরিকবান্ধব কর ব্যবস্থা:
মোদি তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, কর সংস্কার কেবল সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নয়, বরং নাগরিকদের জীবনকে সহজ ও স্বচ্ছ করতে। “আমরা করদাতাদের উপর আস্থা রাখি। প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা কর ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয়, দ্রুত, এবং ঝামেলাহীন করে তুলেছি,”—বললেন প্রধানমন্ত্রী।

Advertisements

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সংস্কার বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করবে, করদাতাদের আস্থা বাড়াবে এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।

অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব:
আয়কর-মুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির হাতে বাড়তি অর্থ থেকে ভোগব্যয় বাড়বে, যা বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়াবে। অন্যদিকে, দ্রুত কর ফেরতের ফলে করদাতাদের তরল নগদের প্রবাহ বাড়বে, যা বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ে সহায়ক হবে।

ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের ফলে কর ফাঁকি রোধের পাশাপাশি কর সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছেও ইতিবাচক বার্তা পাঠাবে।

বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া:
যদিও বিরোধীরা বলছে, কর-মুক্ত সীমা বাড়ানো প্রশংসনীয় হলেও, মুদ্রাস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামের উর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের বাস্তব স্বস্তি কতটা দেবে তা সময়ই বলবে।

অন্যদিকে, কিছু অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেছেন, কর সংগ্রহে হঠাৎ বড় ধাক্কা লাগলে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যেতে পারে, যা সরকারের ব্যয় পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।

সর্বোপরি, আয়কর সংস্কারের এই ধাপগুলি করদাতাদের জন্য বড় স্বস্তির খবর। কর ফেরতের গতি বৃদ্ধি, ফেসলেস অ্যাসেসমেন্টের স্বচ্ছতা, এবং আয়কর-মুক্ত সীমা ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে সরকারের এই পদক্ষেপ মধ্যবিত্ত ও পেশাজীবী শ্রেণির কাছে নিশ্চয়ই ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।