ভারতের আকাশসীমা আধুনিকীকরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করতে চলেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী (IAF)। চলতি মাসের শেষের দিকে নাসিকের হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (HAL)-এর ঘাঁটিতে লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট (LCA) মার্ক ১এ, অর্থাৎ তেজস যুদ্ধবিমানের প্রথম হস্তান্তর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
মোট ৮৩টি তেজস ১এ যুদ্ধবিমান অর্ডার
IAF-এর জন্য মোট ৮৩টি তেজস ১এ যুদ্ধবিমান অর্ডার করা হয়েছে। প্রথম বিমানটি ইতিমধ্যেই হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত, আর দ্বিতীয় বিমানও শিগগিরই যোগ দেবে। সরকারী সূত্রের খবর, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন সিনিয়র কর্মকর্তারা, সম্ভবত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর।
তেজস ১এ হস্তান্তর কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিল কারণ জিই (GE) থেকে ইঞ্জিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ আসেনি। তবে সরকারি সূত্রের খবর, সাপ্লাই চেইনের সমস্যা এখন সমাধান হয়েছে এবং পরবর্তী ইঞ্জিনগুলো শীঘ্রই দেশে পৌঁছাবে।
সুখোই-৩০-এর নতুন সংযোজন IAF Tejas and Sukhoi Modernization
রাশিয়ান ডিজাইনের ১৩টি সুখোই-৩০ এমকেআই বিমানও IAF-এর শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রথম বিমানটি ২০২৭ সালে হস্তান্তর হবে এবং এই বিমানগুলো প্রায় ৫৭ শতাংশ দেশীয় উপাদান দিয়ে তৈরি করা হবে, যা কেন্দ্র সরকারের আত্মনির্ভর ভারত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বর্তমানে IAF-এর কাছে প্রায় ২৬০টি সুখোই বিমান আছে। ২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ১৩টি নতুন বিমান যোগ হলে সামরিক ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। IAF বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রনে পরিচালিত হচ্ছে, যদিও লক্ষ্য ৪০ স্কোয়াড্রন। এই ১৩টি বিমান HAL-এর মাধ্যমে দেশে তৈরি করা হবে এবং ডেলিভারি সময়সূচি অনুযায়ী চলছে। ডিসেম্বর ২০২৪-এ স্বাক্ষরিত ১৩,০০০ কোটি টাকার এই চুক্তি IAF-এর সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
রাফালে-র দেশীয় উৎপাদন সম্ভাবনা
IAF ইতিমধ্যেই দুটি রাফালে স্কোয়াড্রন চালু করেছে। ভবিষ্যতে আরও রাফালে বিমান ক্রয় করতে চাইলে তাদের বড় অংশ দেশেই উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। সম্ভাব্যভাবে প্রকল্পটি তিনটি স্তরে বাস্তবায়িত হতে পারে:
- সাফরান (Safran) ইঞ্জিন দেশীয়ভাবে উৎপাদন করবে।
- একটি প্রাইভেট ফার্ম ফিউজেলাজ তৈরি করবে এবং চূড়ান্ত অ্যাসেম্বলি দেশের ভেতরে হবে।
- DRDO-র তৈরি অস্ত্র এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিমানটির অস্ত্রপত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে।
বর্তমানে IAF ১১৪টি যুদ্ধবিমানের প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছে। তেজস ১এ, সুখোই-৩০ এবং ভবিষ্যতের রাফালে ক্রয় এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
সামরিক সক্ষমতার ভবিষ্যৎ
ভারতের আকাশসীমা আধুনিকীকরণ ও দেশীয় উৎপাদনের এই সমন্বয় কেবল আকাশসীমা শক্তিশালী করছে না, বরং আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকেও বাস্তবায়ন করছে। পরবর্তী বছরগুলোতে এই নতুন বিমানগুলো IAF-এর রণক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়াবে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সঠিক সংমিশ্রণ নিশ্চিত করবে।