ভারতীয় বিমান বাহিনী (IAF) তাদের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে তারা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ (Operation Sindoor) নির্ধারিত কাজগুলি অত্যন্ত নির্ভুলতা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এই অভিযান জাতীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইচ্ছাকৃত এবং বিচক্ষণভাবে পরিচালিত হয়েছে। বিমান বাহিনী জানিয়েছে, অভিযান এখনও চলমান থাকায় বিস্তারিত ব্রিফিং যথাসময়ে প্রদান করা হবে। তারা সকলকে জল্পনা-কল্পনা এবং অযাচাইকৃত তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক পদক্ষেপ। এই অভিযান ২০২৫ সালের ১০ মে ভোরে শুরু হয়, যখন ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটিতে ৯০ মিনিটের নির্ভুল বিমান হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল নুর খান এয়ারবেস (চাকলালা), রফিকি (শোরকোট), মুরিদ, সুক্কুর, সিয়ালকোট, পাসরুর, চুনিয়ান, সারগোধা, স্কার্দু, ভোলারি এবং জ্যাকোবাবাদ। এই ঘাঁটিগুলি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) যুদ্ধ এবং লজিস্টিক ক্ষমতার মূল ভিত্তি ছিল।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর এই অভিযান পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকি এবং সাম্প্রতিক উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে চালানো হয়। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছিলেন, বিশেষ করে ২২ এপ্রিল পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলার পর, যেখানে ২৬ জন, বেশিরভাগই পর্যটক, নিহত হয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের মতো পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে। এর জবাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করার লক্ষ্যে চালানো হয়, যা তাদের আক্রমণ ক্ষমতা এবং সমন্বয়কে পঙ্গু করে দেয়।
The Indian Air Force (IAF) has successfully executed its assigned tasks in Operation Sindoor, with precision and professionalism. Operations were conducted in a deliberate and discreet manner, aligned with National Objectives.
Since the Operations are still ongoing, a detailed…
— Indian Air Force (@IAF_MCC) May 11, 2025
অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ইসলামাবাদের কাছে নুর খান এয়ারবেসের ধ্বংস, যা পাকিস্তানের উচ্চ-পর্যায়ের সামরিক এবং রাজনৈতিক সমন্বয়ের কেন্দ্র। এছাড়া, সারগোধা এয়ারবেস (মুশাফ বেস), যা পাকিস্তানের বিমান অপারেশন এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহের কেন্দ্র, সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে। রফিকি এবং মুরিদের মতো ঘাঁটিগুলির ধ্বংস পাকিস্তানের ফ্রন্টলাইন যুদ্ধ ক্ষমতা এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই হামলার ফলে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, এবং তাদের আক্রমণ ক্ষমতা পঙ্গু হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) ভারতের প্রতিপক্ষের কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানান। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং চীনের মাধ্যমে কূটনৈতিক মধ্যস্থতার জন্য তৎপর হন। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিবৃতিতে জোর দেওয়া হয়েছে যে অভিযানটি জাতীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল এবং এটি ইচ্ছাকৃতভাবে গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত হয়েছে। অভিযানের সাফল্য শুধুমাত্র এর কৌশলগত অর্জনেই নয়, বরং এটি যে মানসিক এবং কৌশলগত প্রভাব ফেলেছে তাতেও। পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটি, রাডার নেটওয়ার্ক এবং কমান্ড হাব ধ্বংসের মাধ্যমে ভারত নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তান নিকট ভবিষ্যতে কোনো সমন্বিত সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষম হবে।
এই অভিযান পাকিস্তানের পারমাণবিক হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধ্বংস করেছে এবং ভারতের প্রচলিত সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন করেছে। তবে, ভারতীয় বিমান বাহিনী জনগণকে অযাচাইকৃত তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে, কারণ অভিযান এখনও চলমান। এটি ইঙ্গিত দেয় যে ভারত পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখছে এবং যেকোনো সম্ভাব্য হুমকির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে শান্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, ভারত দ্বিপাক্ষিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা প্রত্যাখ্যান করেছে, শিমলা চুক্তির উপর জোর দিয়ে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের সামরিক শক্তি এবং কৌশলগত দৃঢ়তার একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। এটি পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে কোনো উসকানি বা পারমাণবিক হুমকি নির্ভুল এবং ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর এই সাফল্য দেশের জন্য গর্বের বিষয় এবং অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য পরিবর্তন করেছে।