Jharkhand Assembly Election: ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-র ক্ষমতার মসনদে দ্বিতীয়বার বসার পথে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন৷ অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী বিধায়ক কল্পনা সোরেন, হয়ে উঠেছেন রাজ্যের অন্যতম শক্তিশালী দম্পতি। বিজেপি যাঁদের ব্যঙ্গ করে ‘বান্টি অর বাবলি’ বলে অভিহিত করেছিল, সেই দম্পতি ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনে আবারও জয়ের পথ নিশ্চিত করেন।
‘হেলিকপ্টার ম্যাডাম’-এর জাদু
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেন নির্বাচনী প্রচারে প্রায় ২০০টি সভা করেন। কল্পনা, যিনি এবছর রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন তাঁর স্বামীর গ্রেফতারের পর, তৃণমূল স্তরে সমর্থন জোগাড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গান্ডেতে পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেএমএম-এর এক কর্মী জানান, “কল্পনা সোরেনকে বিজেপি ব্যঙ্গ করে ‘হেলিকপ্টার ম্যাডাম’ নামে ডেকেছিল, কারণ তিনি ছিলেন তথাকথিত ‘বাইরের লোক’, যেমন গান্ডের স্থানীয় মুনিয়া দেবী। তবে নির্বাচনের ফলাফলে বোঝা যাচ্ছে যে এই ব্যঙ্গ তাঁর জনপ্রিয়তায় খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।”
কল্পনা সোরেন তাঁর স্বামীর পাশে থেকে ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী ভোটারদের মধ্যে একটি বিশেষ আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হন। হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে ইডি-র মামলা এবং তাঁর গ্রেফতারের ঘটনার ফলে তৈরি হওয়া সহানুভূতির ঢেউকে তাঁরা কাজে লাগান।
জেএমএম-এর জয়ধ্বনি
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিকেল ৩.৩০ পর্যন্ত, জেএমএম ৪৩টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে এগিয়ে ছিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জেএমএম সমর্থকরা বাজি ফাটিয়ে, মিষ্টি বিতরণ করে বিজয় উদযাপন শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, জেএমএম-এর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে কৌশলগত পরিকল্পনা এবং বিজেপির প্রচারের সীমাবদ্ধতা। জেএমএম যে প্রভাবশালী নেতারা দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, যেমন চম্পাই সোরেন, সীতা সোরেন এবং লোবিন হেমব্রম, তাঁদের প্রস্থান সত্ত্বেও জেএমএম-এর শক্তি মোটেও কমেনি। বরং, এই দলত্যাগকে পিছনে ফেলে সোরেন দম্পতির নেতৃত্বে দলটি এগিয়ে যায়।
বিজেপির প্রচারের ব্যর্থতা
বিজেপি প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান— একাধিক তারকা প্রচারককে ব্যবহার করেও আদিবাসী ভোটে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয়।
বিজেপি তাদের প্রচারে হিন্দুত্ব, দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ, এবং আদিবাসী অধিকার নিয়ে প্রচুর কথা বললেও, আদিবাসী ভোটারদের মধ্যে সোরেন দম্পতির বার্তা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। সোরেন দম্পতি ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁদের সংযোগকে সামনে রেখে এমন একটি প্রচার চালান, যা বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতিকে কার্যত অতিক্রম করে যায়।
আদিবাসী ভোটে সোরেন দম্পতির আধিপত্য
অর্থপাচারের মামলায় হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারের ঘটনায় বিজেপি রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনা উল্টো সহানুভূতির ঢেউ তোলে। আদিবাসী সমাজের এক বড় অংশ মনে করে যে, এটি ছিল সোরেন পরিবারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
কল্পনা সোরেন, যিনি স্বামীর কারাবাসের সময় দলকে শক্তিশালী রাখতে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখতে অবিচল ছিলেন, নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করেন। তিনি নিজেও বেশ কয়েকটি নির্বাচনী সভা করেন এবং দলীয় সমর্থকদের উৎসাহিত করেন।
বারহাইত ও গান্ডেতে সোরেনদের প্রভাব
বারহাইত বিধানসভা কেন্দ্র থেকে হেমন্ত সোরেন ৩৭,৩৩৪ ভোটের বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। অন্যদিকে, গান্ডেতে কল্পনা সোরেন ১৯তম রাউন্ডের গণনার শেষে ৯,৩৬১ ভোটে এগিয়ে ছিলেন।
এই ফলাফলে স্পষ্ট যে, সোরেন দম্পতির রাজনৈতিক কৌশল এবং নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতা ঝাড়খণ্ডের ভোটারদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিজেপি-র প্রলোভন এবং কৌশলগত প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সোরেন দম্পতির দক্ষ নেতৃত্বের কাছে হার মেনেছে।
ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে সোরেন দম্পতি এখন নতুন যুগের সূচনা করেছেন। ‘হেলিকপ্টার ম্যাডাম’ নামে ব্যঙ্গ সত্ত্বেও কল্পনা সোরেন প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধুমাত্র একজন সহধর্মিণী নন, বরং একজন সফল রাজনৈতিক নেতা। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার এই জয় শুধুমাত্র হেমন্ত সোরেনের ব্যক্তিগত জয় নয়; এটি ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী এবং দলিত সমাজের মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার।
এই নির্বাচন আবারও দেখিয়েছে, রাজনীতিতে মাটি সংলগ্ন থাকা এবং মানুষের আবেগকে বোঝার দক্ষতা সফলতার চাবিকাঠি। ঝাড়খণ্ডের ভোটাররা তাঁদের রায় দিয়ে প্রমাণ করেছেন, কেবল উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনই রাজনীতিতে মূল শক্তি।