ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং শত্রুপক্ষের আক্রমণের হুমকির কারণে , কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (home-ministry) সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে (ইউটি) ১৯৬৮ সালের সিভিল ডিফেন্স আইন ও বিধিমালার অধীনে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্স বিধিমালা (home-ministry)
স্বরাষ্ট্র (home-ministry)মন্ত্রণালয় একটি চিঠিতে সিভিল ডিফেন্স বিধিমালা, ১৯৬৮-এর ১১ নম্বর ধারার উল্লেখ করে জানিয়েছে, রাজ্য সরকারগুলো জনগণ ও সম্পত্তির সুরক্ষা এবং শত্রুপক্ষের আক্রমণের সময় গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে
“রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত (home-ministry)অঞ্চলগুলোতে সিভিল ডিফেন্স ব্যবস্থার উন্নয়ন” শীর্ষক এই চিঠিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জম্মু ও জয়সলমের অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর গত রাতের আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তহবিল এই ধরনের জরুরি ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা যাবে, এবং এই ব্যবস্থাগুলোকে অন্যান্য আর্থিক বাধ্যবাধকতার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, “রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে সিভিল ডিফেন্স বিধিমালার ১১ নম্বর ধারা কার্যকর করতে এবং তাদের নিজ নিজ সিভিল ডিফেন্স পরিচালকদের জরুরি ক্রয় ক্ষমতা প্রদানের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।” এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো সতর্কতামূলক এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থাগুলো দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা।
চিঠিতে বলা হয়েছে
চিঠিতে বলা হয়েছে, “বর্তমান শত্রুপক্ষের আক্রমণের পরিস্থিতিতে, আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সিভিল ডিফেন্স বিধিমালা, ১৯৬৮-এর ১১ নম্বর ধারার প্রতি, যা রাজ্য সরকারগুলোকে শত্রুপক্ষের আক্রমণের সময় জনগণ ও সম্পত্তির ক্ষতি বা আঘাত থেকে সুরক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর নিরবচ্ছিন্ন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তহবিল এই ধরনের ব্যবস্থার খরচ ও চার্জ পরিশোধের জন্য প্রযোজ্য হবে, এবং এই ব্যবস্থাগুলোকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অন্যান্য সমস্ত দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।” মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে,
“আমি কৃতজ্ঞ থাকব, যদি সিভিল ডিফেন্স (home-ministry) বিধিমালা, ১৯৬৮-এর ১১ নম্বর ধারা কার্যকর করা যায় এবং আপনার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সিভিল ডিফেন্স পরিচালকদের প্রয়োজনীয় জরুরি ক্রয় ক্ষমতা প্রদান করা হয়, যাতে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।” কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, রাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে সময়মতো পদক্ষেপ এবং প্রস্তুতি এই ধরনের আক্রমণের প্রভাব কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানের আক্রমণ ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্ত বরাবর সমন্বিত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার লক্ষ্য ছিল জম্মু ও কাশ্মীর এবং রাজস্থানের অঞ্চল। ভারতীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, এই হামলাগুলো ভারতের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রতিহত করা হয়, যার ফলে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এই হামলাগুলো ভারতের অপারেশন সিঁদুরের প্রতিশোধ হিসেবে করা হয় , যেখানে এই সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। অপারেশন সিঁদুর ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে একটি মারাত্মক জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এই ঘটনার পর থেকে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে, উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
ভারতের আছে S-400, পাকিস্তানের HQ-9; কার বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশি শক্তিশালী?
সিভিল ডিফেন্স ব্যবস্থার গুরুত্ব
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (home-ministry) নির্দেশনা সিভিল ডিফেন্স আইন, ১৯৬৮-এর অধীনে জরুরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে। এই আইন রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে শত্রুপক্ষের আক্রমণের সময় জনগণের নিরাপত্তা, সম্পত্তির সুরক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবাগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে।
সিভিল ডিফেন্স পরিচালকদের জরুরি ক্রয় ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে রাজ্যগুলো দ্রুত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, পরিকাঠামো এবং জনবল সংগ্রহ করতে পারবে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যকর প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করবে। গত ৭ মে, ২০২৫-এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের ২৪৪টি সিভিল ডিফেন্স জেলায় ব্যাপক মহড়া পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন, ব্ল্যাকআউট অনুশীলন, এবং স্থানান্তর পরিকল্পনা পরীক্ষা করা হয়। এই মহড়া পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে জরুরি প্রস্তুতি পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও শান্তির আহ্বান
বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত অস্থিতিশীল, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শন এবং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাসের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুর তাদের নাগরিকদের জম্মু ও কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বিশ্ব নেতারা উভয় পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজ্য ও জনগণের প্রতি আহ্বান
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (home-ministry) রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে তাদের সিভিল ডিফেন্স অবকাঠামো শক্তিশালী করতে এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বলেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ছদ্মবেশ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, জনগণকে জরুরি পরিস্থিতির জন্য টর্চ, মোমবাতি, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং নগদ অর্থ প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিভিল ডিফেন্স ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অটল প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।
সিভিল ডিফেন্স বিধিমালার ১১ নম্বর ধারার মাধ্যমে রাজ্যগুলোকে জরুরি ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত করছে যে, শত্রুপক্ষের আক্রমণের মুখে জনগণ এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো সুরক্ষিত থাকবে। এই সংকটময় মুহূর্তে রাজ্য ও জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির আহ্বান এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।