ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রভাবে কর্ণাটকে বিপাকে প্রদেশ কংগ্রেস

ক্ষমতায় না থাকলেও ময়দানে আছে বিজেপি। দ্রাবিড়ভূমিতে এটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কংগ্রেসের। কর্ণাটকের উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ছে গেরুয়া বাহিনীর দাপট। এই ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকায়…

Karnataka religious politics

ক্ষমতায় না থাকলেও ময়দানে আছে বিজেপি। দ্রাবিড়ভূমিতে এটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কংগ্রেসের। কর্ণাটকের উপকূলবর্তী এলাকায় বাড়ছে গেরুয়া বাহিনীর দাপট। এই ক্রমবর্ধমান হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রভাবে বিস্তীর্ণ এলাকায় চাপা উত্তেজনা। এর ফলে উদ্বেগে কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস। এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্যা হিন্দু। কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির রিপোর্টের উল্লেখ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

কর্ণাটক (Karnataka) প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (কেপিসিসি) তথ্যানুসন্ধান কমিটির একজন বিধায়কের বক্তব্য অনুযায়ী, এই অঞ্চলে হিন্দুত্ব রাজনীতির উত্থান সম্প্রদায়গুলির মধ্যে চাপা উত্তেজনা ও বিভাজন সৃষ্টি করছে। কমিটি সম্প্রতি দক্ষিণ কন্নড় সফর করে স্থানীয় নেতা, সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনার পর এই তথ্য জানিয়েছে।

   

১৯৭০-এর দশকে মুখ্যমন্ত্রী দে. দেবরাজ উর্সের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকারের ভূমি সংস্কার কর্মসূচি দক্ষিণ কন্নড়ের (Karnataka) পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, বিশেষ করে বিল্লাভা সম্প্রদায়কে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন করেছিল। এই পরিবারগুলির পরবর্তী প্রজন্মের যুবকরা, যারা শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত উভয়ই, বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

কেপিসিসি কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ঐতিহাসিক ঘটনার অজুহাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার চালিয়ে যুবকদের মধ্যে তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। প্রশাসন ও পুলিশের কিছু কর্মকর্তার হিন্দুত্ববাদী কর্মীদের প্রতি নরম মনোভাব এবং অঞ্চলে কংগ্রেসের দুর্বল নেতৃত্ব এই প্রবণতাকে আরও উৎসাহিত করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হিন্দুত্ববাদের প্রভাবের জবাবে মুসলিম যুবকরাও ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সংগঠিত হচ্ছেন। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই)-এর মতো সংগঠন তহবিল সংগ্রহ, যুব সমাবেশ এবং সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছড়াচ্ছে।

এই দ্বিমুখী ধর্মীয় মেরুকরণ দক্ষিণ কন্নড়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক তিনটি হত্যাকাণ্ড—কেরলের ৩৮ বছর বয়সী অশরফের গণপিটুনি, দ্বৈত হত্যার অভিযুক্ত ৩০ বছর বয়সী সুহাস শেট্টির হত্যা, এবং মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ৩২ বছর বয়সী আব্দুল রহিমানের হত্যা—এই উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মন্দির সংস্কার, ভজন মণ্ডলী, এবং হিন্দুত্ববাদী নেতাদের আমন্ত্রণে সেমিনারের মাধ্যমে সংগঠিত প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। অন্যদিকে, মুসলিম সম্প্রদায়ও ধর্মীয় সমাবেশ বাড়িয়েছে। কমিটির এক সদস্য জানান, বিজেপি নেতারা (Karnataka) কংগ্রেসের উন্নয়নমূলক কাজের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাকে শক্তিশালী করছে। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কন্নড়ার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিজেপির জয় তাদের প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ।

দক্ষিণ কন্নড়ের ইতিহাসে বামপন্থী আন্দোলন ও ভূমি সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৭০-এর দশকে বামপন্থী গণআন্দোলনের চাপে ভূমি সংস্কার বিল্লাভা সম্প্রদায়কে ক্ষমতায়িত করেছিল। কিন্তু, বর্তমানে এই সম্প্রদায়ের যুবকরা বিজেপির শক্তিশালী ভোটব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছে (Karnataka)। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে অনেক কংগ্রেস ও বাম কর্মী নরম হিন্দুত্ববাদী অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য ক্ষতিকর।

Advertisements

কেপিসিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলার মাত্র ২% মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়, এবং ৮% উস্কানি দেয়। বাকি ৯০% শান্তি চায় এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় উদ্বিগ্ন। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রশাসনিক কার্যকারিতা ও অঞ্চলের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। কমিটি মঙ্গলুরু শহর ও গ্রামীণ এলাকার জন্য পৃথক কংগ্রেস কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে।

এক্স-এ দ্য হিন্দুর এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা তীব্র হয়েছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ভূমি সংস্কারের সুবিধাভোগী যুবকরা এখন হিন্দুত্ববাদের পতাকা বহন করছে (Karnataka)। কংগ্রেসের দুর্বল নেতৃত্বের জন্য কন্নড়ে বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে।” তবে, কেউ কেউ মনে করেন, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শ্রেণিগত পার্থক্যও এই বিভাজনের জন্য দায়ী।

বসবাসযোগ্য সেরা দশে নেই বাংলার কোনও শহর

ডিওয়াইএফআই-এর কর্ণাটক (Karnataka) সভাপতি মুনীর কাটিপাল্লা বলেন, “মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ধনী ব্যবসায়ী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দরিদ্র শ্রেণির উপস্থিতি সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতিয়ার হয়েছে।” দক্ষিণ কন্নড়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৯২ সাল থেকে জেলায় একাধিক দাঙ্গা হয়েছে।

২০২৩ সালে ৮৪টি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং ৪৪টি ঘৃণামূলক বক্তৃতার ঘটনা রেকর্ড করা হয়। সরকার বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করলেও, কেপিসিসি শান্তি ফিরিয়ে আনতে আরও কঠোর পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে। এই প্রতিবেদন ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করবে।