রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (Bhagwat) শতবর্ষ উপলক্ষে দিল্লিতে আয়োজিত একটি বক্তৃতা সিরিজে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রাকৃতিক ধর্ম সমন্বয়ের, সংঘাতের নয়।” তিনি আরও স্পষ্ট করেছেন যে, হিন্দু কে? “যিনি নিজের বিশ্বাসের পথ অনুসরণ করেন এবং ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষদেরও সম্মান করেন, তিনিই হিন্দু।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ভাগবত হিন্দুত্বের একটি সর্বাঙ্গীণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংজ্ঞা তুলে ধরেছেন, যা ভারতীয় সংস্কৃতির সমন্বয়বাদী চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।দিল্লিতে ‘আরএসএস: শতবর্ষের পথচলা’ শীর্ষক এই বক্তৃতা সিরিজে মোহন ভাগবত আরএসএস-এর ইতিহাস, দর্শন এবং ভারতীয় সমাজে এর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, “ভারতীয় সংস্কৃতি কখনও বিভেদ বা সংঘাতের পক্ষে ছিল না। আমাদের ধর্ম আমাদের শিখিয়েছে যে, সকল পথই সত্যের দিকে নিয়ে যায়।” তিনি আরএসএস-এর মূল দর্শন ব্যাখ্যা করে বলেন যে, সংঘের লক্ষ্য হলো সমাজে ঐক্য ও সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রত্যেকে তাদের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে।
ভাগবতের এই বক্তব্যে হিন্দুত্বের সংজ্ঞা নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, “হিন্দুত্ব কোনও সংকীর্ণ ধর্মীয় ধারণা নয়। এটি একটি জীবনদর্শন, যা বৈচিত্র্যকে গ্রহণ করে এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।” তিনি আরও জানান যে, হিন্দু হলো সেই ব্যক্তি যিনি নিজের বিশ্বাসে অটল থাকেন এবং অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এই সংজ্ঞার মাধ্যমে তিনি হিন্দুত্বকে একটি সর্বভারতীয় ও সর্বজনীন ধারণা হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা ভারতের বহুত্ববাদী ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।আরএসএস প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদযাপনের এই অনুষ্ঠানে ভাগবত সংঘের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের উপরও আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, “১৯২৫ সালে ড. কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত আরএসএস গত একশো বছরে ভারতীয় সমাজে ঐক্য, সেবা এবং শৃঙ্খলার মাধ্যমে অবদান রেখেছে।” তিনি জানান যে, আরএসএস-এর শাখাগুলি আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে সেবা ও সংগঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ভাগবত আরও বলেন, “ভারতের অগ্রগতির জন্য আমাদের সমাজের প্রতিটি অংশকে একত্রিত করতে হবে। ধর্ম, জাত, বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে বিভেদ সৃষ্টি করা আমাদের সংস্কৃতির পরিপন্থী।” তিনি আরএসএস-এর ভূমিকাকে ‘সমাজের মেরুদণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন যে, সংঘ কোনও রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি একটি সামাজিক সংগঠন, যার লক্ষ্য জাতীয় চরিত্র গঠন এবং সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।
এই বক্তৃতা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক্স-এর একাধিক পোস্টে দেখা গেছে যে, অনেকে ভাগবতের হিন্দুত্বের এই ব্যাখ্যাকে স্বাগত জানিয়েছেন, যা বৈচিত্র্য ও সমন্বয়ের উপর জোর দেয়। তবে, কিছু সমালোচক মনে করেন যে, আরএসএস-এর এই বক্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, বিশেষ করে আগামী নির্বাচনের প্রেক্ষিতে।
ভাগবতের এই বক্তব্য ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির উপর নতুন করে আলোকপাত করেছে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো একটি এমন ভারত গড়ে তোলা, যেখানে প্রত্যেকে নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।”
বন্যার কবলে মানালি, ভেঙে গিয়েছে লে হাইওয়ে
আরএসএস-এর শতবর্ষ উদযাপনের এই মুহূর্তে তাঁর এই বক্তব্য সংঘের ভবিষ্যৎ দিশা এবং ভারতীয় সমাজে এর ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে। আগামী দিনে এই বক্তব্য কীভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।