ধর্মনিরপেক্ষ ভারত কাকে বলে দেখিয়ে দিলেন পারভেজ

কবি, লেখক, দার্শনিক থেকে শুরু করে মনিষীরা সকলেই ধর্মনিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছেন। দেশের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক…

কবি, লেখক, দার্শনিক থেকে শুরু করে মনিষীরা সকলেই ধর্মনিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছেন। দেশের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও প্রায়ই বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক হানাহানি খবর প্রকাশ্যে আসে।

সম্প্রতি দিল্লি, কর্নাটকে সাম্প্রদায়িক কারণে হিংসার ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। এরই মধ্যে এক ব্যতিক্রমী কিন্তু দেশের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের ছবি ধরা পড়ল উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে। টাকার অভাবে এক হিন্দু তরুণীর বিয়ে আটকে যাচ্ছিল। এ ঘটনাটি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশী মুসলিমরা। তাঁদের সকলের চেষ্টায় হইহই করে চার হাত এক হল।
২০২০ সালে করোনা মহামারীতে প্রাণ হারিয়েছেন পূজা চৌরাসিয়ার বাবা। কাকা রাজেশ চৌরাসিয়ার কাছেই থাক ছিলেন পূজা। সম্প্রতি তার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে এই বিয়ে কিভাবে দেবেন তা নিয়ে ভেবে কুল করতে পারছিলেন না পূজার কাকা রাজেশ। টাকার অভাবে বিয়ে বাড়ির জন্য কোনও মণ্ডপ তৈরি করতে পারছিলেন না। এমনকি চাহিদামত গহনাপত্রও জোগাড় করে উঠতে পারেননি। তাই রাজেশ বিষয়টি জানান প্রতিবেশী পারভেজকে।

বিষয়টি জানার পর পূজার বিয়ের যাবতীয় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন পারভেজ ও তাঁর পরিবার। বিয়ে বাড়ির জন্য পারভেজ নিজের বাড়িটি পূজাদের কয়েকদিনের জন্য ছেড়ে দেন। সেখানে বাধা হয় মন্ডপ। পূজার বিয়ে উপলক্ষে অতিথিদের যাবতীয় আপ্যায়নের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় পারভেজের পরিবারের প্রতিটি সদস্য। পারভেজের বাড়ির উঠোনে খাওয়া-দাওয়ার বন্দোবস্ত হয়। শুধু তাই নয়, পূজার স্বামীকে গলার চেন উপহার দেন পারভেজের স্ত্রী। পারভেজের পরিবারের অন্য সদস্যরাও পূজাকে কিছু না কিছু উপহার দিয়েছেন।

পারভেজের স্ত্রী বলেছেন, পূজা তো আমাদের মেয়ের মতোই। ওর বিয়েতে আমরা যে এভাবে সাহায্য করতে পারব সেটা কখনও ভাবিনি। পূজার বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরে আজ আমরাও খুব আনন্দিত। পারভেজের পরিবারের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নিয়েছেন পূজা। তিনি জানিয়েছেন, পারভেজ চাচা এবং তাঁর পরিবার যদি না এগিয়ে আসত তাহলে আমার বিয়ে বন্ধ হয়ে যেত। ওনারা যে কাজ করলেন তার জন্য কোন কৃতজ্ঞতাই যথেষ্ট নয়। এটাই কিন্তু প্রকৃত ভারত। যথারীতি এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। নেটিজেনরা সকলেই একবাক্যে পারভেজ ও তাঁর পরিবারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। নেটিজেনরা বলেছেন, পারভেজ ও তাঁর পরিবার দেখিয়ে দিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত কাকে বলে। বিভেদকামী, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লোকজনকে সপাটে চড় কষিয়েছেন পারভেজ।