বাংলাদেশের রংপুর-চট্টগ্রাম দখলের হুমকি হিমন্তর

ভারতীয় রাজনীতি ও কূটনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার (Himanta Biswa Sarma) সাম্প্রতিক বক্তব্য। তিনি বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশের দু’টো চিকেনস…

Himanta Biswa Sarma Sparks Diplomatic Row with Threats to Bangladesh's Rangpur and Chattogram

ভারতীয় রাজনীতি ও কূটনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার (Himanta Biswa Sarma) সাম্প্রতিক বক্তব্য। তিনি বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বাংলাদেশের দু’টো চিকেনস নেক আছে। আমার ভারতের একটা চিকেনস নেক আছে। আর বাংলাদেশের দু’টো চিকেনস নেক আছে। আমার একটা চিকেনস নেকে বাংলাদেশ হামলা করলে আমি তো দু’টো চিকেনস নেকে হামলা করব।”

এই বক্তব্যে সরাসরি বাংলাদেশে রংপুর ও চট্টগ্রাম অঞ্চলকে হুমকির ভাষায় উল্লেখ করেছেন হিমন্ত। তিনি আরও বলেন, “মেঘালয় থেকে চিটাগং পোর্টের চিকেন নেক আমাদের চিকেন নেকের থেকে সরু। রিং ছুড়লেই চলে আসবে। এটা কথার কথা। আমি আমার চিকেনস নেকের কথা বলি। চিকেনস নেকে হাত দেওয়ার আগে বাংলাদেশের ভাবা উচিত।” তাঁর মতে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রমাণ হয়েছে ভারত কতটা শক্তিশালী রাষ্ট্র। এমনকি তিনি বলেন, “ভারতে হামলার বিষয়ে ভাবতে হলে বাংলাদেশকে ১৪ বার জন্ম নিতে হবে।”

   

এই মন্তব্যগুলো শুধু রাজনৈতিক বিতর্কই নয়, দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকেও উদ্বেগজনক। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানা অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বিদ্যমান।

হিমন্তর মন্তব্য অনুযায়ী, ভারতের ‘চিকেনস নেক’ হলো শিলিগুড়ি করিডর, যার প্রস্থ মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত রাখে। একদিকে রয়েছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে নেপাল ও ভুটান। এই করিডর কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এই অঞ্চলকে ঘিরে সবসময় সতর্ক থাকে।

তবে হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করেন, বাংলাদেশেরও রয়েছে দু’টি চিকেনস নেক — উত্তরে রংপুর এবং দক্ষিণে চট্টগ্রাম। রংপুর অঞ্চল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা। তাঁর কথায়, এই এলাকাটি ভারতের দখলে এলে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের মাঝে আর থাকবে না। এতে ভারতের চিকেনস নেক চওড়া হয়ে যাবে।

অপরদিকে, বাংলাদেশের ফেনি অঞ্চলকেও হিমন্ত ‘চিকেনস নেক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এটি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তের কাছাকাছি এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত। তাঁর ভাষায়, “বাংলাদেশ থেকে ফেনি বাদ গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে চট্টগ্রাম। আর চট্টগ্রাম ভারতে এলে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সমুদ্রপথে সরাসরি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।”

Advertisements

এইসব মন্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হলেও এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তহীন ও অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি, তবে জনমনে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, বরং উপমহাদেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিবেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের মতো একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতার কাছ থেকে আরও দায়িত্বশীল বক্তব্য প্রত্যাশিত। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা জরুরি।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আগামী দিনে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি হবে কিনা, সেটি এখন সময়ই বলবে। তবে হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্য যে আলোড়ন তুলেছে, তা আর অস্বীকার করার উপায় নেই।