ভারতের প্রখ্যাত আইনজীবী এবং কলেজিয়াম ব্যবস্থার স্বঘোষিত ‘কঠোর সমালোচক’ হরিশ সালভে সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি গুরুতর অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। বিচারপতি বর্মার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা উদ্ধারের অভিযোগ উঠেছে, এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এলাহাবাদ হাইকোর্টে স্থানান্তরের প্রস্তাবিত সিদ্ধান্তকে স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন সালভে। তিনি বলেছেন, কলেজিয়াম ব্যবস্থা এ ধরনের গুরুতর ঘটনা মোকাবিলায় সক্ষম নয় এবং এই ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে যে তাঁর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং কলেজিয়ামের ভূমিকা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কলেজিয়াম, যা ভারতে বিচারপতিদের নিয়োগ ও স্থানান্তরের জন্য দায়ী, ইতিমধ্যেই বিচারপতি বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নতুন তথ্য প্রকাশের পর হরিশ সালভে এই স্থানান্তরকে ‘ভুল’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
নিজেকে কলেজিয়াম ব্যবস্থার ‘কঠোর সমালোচক’ হিসেবে উল্লেখ করে সালভে বলেছেন, “এই ব্যবস্থা এমন গুরুতর অভিযোগের মোকাবিলায় সম্পূর্ণ অক্ষম। বিচারপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা বিভিন্ন দিক থেকে গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন। স্থানান্তর এই মুহূর্তে কোনো সমাধান নয়। এক্ষেত্রে একমাত্র যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ হবে তাঁকে সাসপেন্ড করা।” তিনি আরও যোগ করেছেন যে, এই ঘটনা কলেজিয়াম ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে এবং এই ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সাংবিধানিক সংশোধনী আনা জরুরি।
সালভের মতে, কেবলমাত্র স্থানান্তরের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। তিনি বলেন, “একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ উঠলে তাঁকে অন্য আদালতে স্থানান্তর করা মানে সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া। এটি বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা আরও ক্ষুণ্ণ করবে।” কলেজিয়াম ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনার মুখে রয়েছে। এই ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও স্থানান্তরের ক্ষমতা কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির হাতে থাকে। সমালোচকদের মতে, এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। হরিশ সালভে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন, “কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত একাধিক স্তরে ভুল। এই ধরনের ক্ষেত্রে সঠিক তদন্ত এবং কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।”
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে এই অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন যে এই ঘটনা বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে তুলেছে। কেউ কেউ বলছেন, বিচারপতি বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর সাসপেনশনই একমাত্র যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ হবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এই ঘটনা ভারতের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হরিশ সালভের মতো প্রভাবশালী আইনজীবীর এই মন্তব্য কলেজিয়াম ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। বিচারপতি যশবন্ত বর্মার স্থানান্তর স্থগিত হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এই ঘটনা বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নকে সামনে এনে দিয়েছে। আগামী দিনে এই বিষয়ে কলেজিয়াম ও সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেশের আইনি ও রাজনৈতিক মহলের নজরে থাকবে।