ঢাকা: পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা (LET)-র প্রধান হাফিজ সাইদ ভারতের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র করছে এমনি খবর গোয়েন্দা সূত্রে (Hafiz Saeed)। হাফিজ এবার ভারতে জঙ্গি হামলায় ব্যবহার করবে বাংলাদেশকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে এক সিনিয়র লস্কর কমান্ডারের জনসভায়।
হাফিজ সাইদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পাকিস্তানের মারকাজি জামিয়াত আহলে হাদিসের জেনারেল সেক্রেটারি ইবতিসাম এলাহি জাহির গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছে এমনটাই জানা যাচ্ছে সূত্রের খবরে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সংবেদনশীল এলাকা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং লালমনিরহাট অঞ্চল গুলিকে ইতিমধ্যেই কড়া নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
মুসলিমরা কি RSS-এ যোগ দিতে পারে? “একটাই শর্তে”, বললেন ভাগবত
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে তিনি স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলার পরিকল্পনা করছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই ঘটনা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক করে তুলেছে, যারা এখন সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীরবতা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে, যা পাকিস্তান-বাংলাদেশের মিলিত জঙ্গি জোটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হাফিজ সাইদ, যিনি ২০০৮-এর মুম্বই হামলা এবং ২০০১-এর সংসদ হামলার মাস্টারমাইন্ড, এখনও পাকিস্তানের জেলে থাকলেও তার নেটওয়ার্ক সক্রিয়। এক সাম্প্রতিক জনসভায় লস্করের এক কমান্ডার বলেছেন, “জাহির বাংলাদেশে গিয়েছেন যুবকদের জিহাদের প্রশিক্ষণ দিতে।
এটা ভারতের বিরুদ্ধে নতুন ফ্রন্ট খোলার পরিকল্পনা। কাশ্মীর এবং প্যালেস্টাইনের মতো ভারতকে চাপে ফেলতে হবে।” জাহিরের এই সফর তার দ্বিতীয়—প্রথমটি ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ ছিল, যা এক সপ্তাহের বেশি দীর্ঘায়িত হয়।
সে ২৪ বছর ধরে হাফিজ সাইদের সাথে যুক্ত, এবং সাইদের শ্যালক আব্দুল রহমান মক্কির মতো নিহত জঙ্গিদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। জাহিরের আহলে হাদিস সংগঠন সালাফি নেটওয়ার্কের আড়ালে কাজ করে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় র্যাডিক্যালাইজেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। রাজশাহীর এক বড় ইসলামি কনফারেন্সে (৬-৭ নভেম্বর) সে অংশ নেবে।
এই সফরের সময়সীমা পাকিস্তানের জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার ঢাকা সফরের সাথে মিলে যায়, যিনি অক্টোবরের শেষে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছিলেন। ইউনুস সরকারের নীরবতা সন্দেহজনক—যেখানে শেখ হাসিনার আমলে এমন জঙ্গি নেটওয়ার্ক কঠোরভাবে দমন করা হতো। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র বলছে, জাহিরের স্পিচগুলোতে ভারতবিরোধী বিষই বর্ণিত হচ্ছে: “কাশ্মীরের মুক্তি এবং ভারতের বিরুদ্ধে মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা দরকার।”
এর ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে ‘ব্লিড নর্থইস্ট ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনা চালু হতে পারে, যেখানে স্লিপার সেলস দিয়ে হামলা করা হবে। ২০০১-০৬ সালের মতো আইএসআই-পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকা থেকে ভারতের হার্টল্যান্ডে হামলা হয়েছে, এবং এখন সেই পুরনো ভয় ফিরে আসছে।ভারতের পক্ষ থেকে উদ্বেগ বাড়ছে।
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং আইবি সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে, বিশেষ করে ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অসমের সীমান্তে। এক সিনিয়র অফিসার বলেন, “জাহিরের উপস্থিতি পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজির পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করে ভারতকে অস্থিতিশীল করা।
ইউনুস সরকারের নীরবতা এটাকে উৎসাহিত করছে।” জাকির নায়েকের নভেম্বরের শেষের সফরও এই নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতে পারে। বাংলাদেশের জামায়াত-ই-ইসলামীর মতো গ্রুপগুলো এখন সক্রিয়, যা হাসিনার আমলে নিষিদ্ধ ছিল।
স্থানীয় মানুষের মধ্যে ভয়ের ছায়া পড়েছে। রাজশাহীর এক যুবক আহমেদ হোসেন বলেন, “জাহিরের স্পিচ শুনে আমরা ভয় পাই। আমরা শান্তি চাই, না যে কেউ আমাদের র্যাডিক্যাল করে হামলার অংশ বানাবে। ইউনুস সাহেব কেন চুপ?”
রাজনৈতিকভাবে, এটা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে বিষাক্ত করতে পারে। ইউনুসকে ‘শান্তির মানুষ’ বলে পরিচিতি দিলেও, তার পাকিস্তান-পন্থী নীতি যেমন জেনারেল মির্জাকে দেওয়া ম্যাপ, যাতে ভারতের উত্তর-পূর্বকে বাংলাদেশের অংশ দেখানো হয়েছে সন্দেহ বাড়িয়েছে। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক এই ঘটনায় বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে, কিন্তু ঢাকা থেকে কোনও সাড়া এখনও আসেনি।
