দিল্লি-সহ দেশের একাধিক ব্যস্ত বিমানবন্দরের আকাশে জিপিএস স্পুফিং এবং জিএনএসএস (গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম)–এর ব্যাঘাত বাড়ছে—এমনই গুরুতর তথ্য রাজ্যসভায় জানাল কেন্দ্র। সোমবার লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু জানান, গত এক বছরে বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে একাধিকবার স্যাটেলাইট–নির্ভর নেভিগেশন ব্যবস্থায় অস্বাভাবিক সংকেত পাওয়া গিয়েছে।
মন্ত্রী জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ডি-জিসিএ (DGCA) জিপিএস জ্যামিং বা স্পুফিংয়ের ঘটনা বাধ্যতামূলকভাবে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেওয়ার পর থেকেই কলকাতা, অমৃতসর, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু এবং চেন্নাই—সহ দেশের আরও কয়েকটি বড় বিমানবন্দরে নিয়মিত এমন রিপোর্ট জমা পড়ছে।
দিল্লির রানওয়ে ১০–এ স্পুফিংয়ের ঘটনা, সক্রিয় করা হয়েছে বিকল্প পদ্ধতি
রাজ্যসভার সদস্য এস নিরাঞ্জন রেড্ডির প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (IGIA) স্যাটেলাইট–ভিত্তিক অবতরণ পদ্ধতি ব্যবহার করার সময় কিছু বিমান জিপিএস স্পুফিংয়ের শিকার হয়েছে। ওই বিমানের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কন্টিনজেন্সি প্রোটোকল চালু করা হয়। তবে অন্যান্য রানওয়ের প্রচলিত নেভিগেশন সিস্টেম ব্যবহারকারী বিমান পরিষেবা প্রভাবিত হয়নি।
নিরাপত্তার নির্দেশ কঠোর, রিয়েল-টাইম রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক GPS Spoofing Indian Airports
জিএনএসএস ব্যাঘাত রুখতে ডি-জিসিএ ২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি পরামর্শপত্র (অ্যাডভাইজরি সার্কুলার) জারি করে। ২০২৫ সালের ১০ নভেম্বর নতুন একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোসিডিউর (SOP) চালু হয়েছে, যা বিশেষভাবে দিল্লি বিমানবন্দরের আশপাশে রিয়েল-টাইম GPS স্পুফিং রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করেছে। পাইলট এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের যে কোনও অস্বাভাবিক জিপিএস সিগন্যাল সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে।
মন্ত্রী আরও জানান, স্যাটেলাইট–নির্ভর নেভিগেশন ব্যাহত হলে বিকল্প হিসেবে কাজ করার জন্য ভারত আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা মেনে এখনও ‘মিনিমাম অপারেটিং নেটওয়ার্ক’ (MON) বজায় রাখছে—যেখানে প্রচলিত গ্রাউন্ড–বেসড নেভিগেশন ও নজরদারি ব্যবস্থা সচল থাকে।
স্পুফিংয়ের উৎস খুঁজতে তদন্ত, মাঠে নেমেছে WMO
এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (AAI) ইতিমধ্যেই ওয়্যারলেস মনিটরিং অর্গানাইজেশন (WMO)-কে স্পুফিংয়ের উৎস শনাক্ত করার দায়িত্ব দিয়েছে। ডি-জিসিএ এবং এএআই–এর ভাগ করে দেওয়া প্রাথমিক লোকেশন ডেটার ভিত্তিতে সিগন্যালের উৎস সন্ধানে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংস্থাকে।
সাইবার-হুমকি বাড়ায় জোরদার সুরক্ষা ব্যবস্থা
মন্ত্রী জানান, বিমান পরিবহণ খাতকে লক্ষ্য করে র্যানসমওয়্যার, ম্যালওয়্যার—সহ নানা সাইবার হুমকি বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এএআই তাদের নেটওয়ার্ক ও আইটি পরিকাঠামোয় উন্নত সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থার মোতায়েন শুরু করেছে। ন্যাশনাল ক্রিটিকাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোটেকশন সেন্টার (NCIIPC) এবং সিইআরটি-ইন (CERT-In)-এর নির্দেশিকা মেনেই এই আপগ্রেড চলছে।
পরিকাঠামোর নিরাপত্তা জোরদার করতে নিয়মিত নতুন সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যোগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বিমান-নিরাপত্তা মঞ্চগুলিতেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছে ভারত, যাতে বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা পদ্ধতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে থাকা যায়।
জিপিএস ব্যাঘাতের পর পরই যে কড়া ও বহুস্তরীয় সুরক্ষা-পদ্ধতি প্রস্তুত করা হয়েছে, তা জানিয়ে কেন্দ্র পরিষ্কার করেছে—ভারতের আকাশসীমায় নেভিগেশন নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকবে।
