সপ্তাহের শেষে হঠাৎই বাড়ল সোনা রুপোর দাম

ভারতে সোনা ও রুপোর দাম (Gold and Silver Price) আজ, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, সকালে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে এসে এই…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/gold-silver-1.jpg

ভারতে সোনা ও রুপোর দাম (Gold and Silver Price) আজ, শনিবার ২২ মার্চ ২০২৫, সকালে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। মার্চ মাসের শেষের দিকে এসে এই দুই মূল্যবান ধাতুর দামে উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা, ডলারের বিনিময় হার এবং দেশীয় চাহিদার উপর নির্ভর করছে। আজকের দাম প্রকাশের পর ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা এই প্রবণতা নিয়ে বিশ্লেষণে ব্যস্ত। গতকাল, ২১ মার্চ, দিল্লিতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ১০ গ্রামে ৯০,২২০ টাকা এবং রুপোর দাম ছিল কিলোগ্রাম প্রতি ১,১২,০০০ টাকা। আজকের হিসেবে সামান্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকলেও, সামগ্রিকভাবে দাম উঁচু স্তরে রয়েছে। এই প্রতিবেদনে ভারতের প্রধান শহরগুলোতে সোনা ও রুপোর দাম এবং এর পিছনের কারণগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হল।

প্রধান শহরে সোনা ও রুপোর দাম
আজ সকালে দিল্লিতে ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ১০ গ্রামে ৯০,২৫০ টাকা এবং রুপোর দাম কিলোগ্রাম প্রতি ১,১২,৫০০ টাকা রয়েছে বলে জানা গেছে। মুম্বইয়ে সোনার দাম ৯০,৩৮০ টাকা এবং রুপো ১,১৩,০০০ টাকা। কলকাতায় ২৪ ক্যারেট সোনা ১০ গ্রামে ৯০,৪০০ টাকা এবং রুপো কিলোগ্রাম প্রতি ১,১৩,২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চেন্নাইয়ে সোনার দাম ৯০,৩৫০ টাকা এবং রুপো ১,১৩,৫০০ টাকা। বেঙ্গালুরুতে সোনা ৯০,৩০০ টাকা এবং রুপো ১,১২,৮০০ টাকা। এছাড়া, হায়দ্রাবাদে সোনার দাম ৯০,৪৫০ টাকা এবং রুপো ১,১৩,৭০০ টাকা। আহমেদাবাদে সোনা ৯০,২০০ টাকা এবং রুপো ১,১২,৩০০ টাকা। এই দামগুলো রাজ্যভিত্তিক মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং পরিবহন খরচের তারতম্যের কারণে ভিন্ন হয়। ২২ ক্যারেট সোনার দাম ২৪ ক্যারেটের তুলনায় প্রায় ৮-১০ শতাংশ কম, যা গহনা কেনার জন্য জনপ্রিয়।

   

দামের পিছনে কারণ
সোনা ও রুপোর দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রায় ৮৫ ডলার প্রতি ব্যারেলের কাছাকাছি রয়েছে, যা গতকালের তুলনায় স্থিতিশীল। তবে, স্পট গোল্ডের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় ২,৯৯০ ডলার প্রতি আউন্স এবং স্পট সিলভার ৩৩.৮০ ডলার প্রতি আউন্সে রয়েছে। এই উচ্চমূল্যের পিছনে রয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডলারের দুর্বলতা এবং নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বৃদ্ধি। ভারতে রুপির বিনিময় হার (প্রায় ৮৩ টাকা প্রতি ডলার) স্থিতিশীল থাকায় আমদানি খরচে বড় পরিবর্তন হয়নি। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) সোনার ফিউচার দাম (এপ্রিল ২০২৫ মেয়াদ) আজ ৮৮,০০০ টাকার কাছাকাছি এবং রুপোর ফিউচার (মে ২০২৫ মেয়াদ) ১,০২,০০০ টাকায় ট্রেড করছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের নীতি শিথিলকরণের প্রত্যাশা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সোনা ও রুপোর দাম বাড়িয়েছে।

দেশীয় চাহিদা ও প্রভাব
ভারতে সোনা ও রুপোর চাহিদা সাংস্কৃতিক ও বিনিয়োগের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। মার্চ মাসে বিয়ের মরশুম শেষ হলেও, বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখছেন। গত সপ্তাহে হোলির সময় সোনার দাম ১০ গ্রামে ৮৯,৭৮০ টাকায় এবং রুপো ১,০৩,০০০ টাকায় পৌঁছেছিল। আজকের দাম তারই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। তবে, উচ্চ দামের কারণে শারীরিক সোনা ও রুপোর চাহিদা কিছুটা কমেছে, বিশেষ করে গহনার বাজারে। রুপোর শিল্পগত ব্যবহার, যেমন ইলেকট্রনিক্স ও সৌর প্যানেলে, এর দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। ভারতের আমদানি নির্ভরতা (প্রায় ৯০ শতাংশ) এবং আমদানি শুল্কও দামের উপর প্রভাব ফেলছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও হলমার্কিংয়ের কঠোরতা সোনা ও রুপোর বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করলেও, খরচ বাড়িয়েছে।

Advertisements

জনগণের প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্চ দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কলকাতার একজন গহনা ব্যবসায়ী, অমিত সাহা, বলেন, “দাম বেশি থাকায় গ্রাহকরা ছোট গহনা বা কয়েন কিনছেন। বড় কেনাকাটা কমেছে।” দিল্লির বাসিন্দা রিনা গুপ্তা জানান, “বিয়ের জন্য সোনা কিনতে গিয়ে বাজেট বাড়াতে হয়েছে। দাম কমার অপেক্ষায় আছি।” বিনিয়োগকারীরা অবশ্য এই উত্থানকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

অর্থনৈতিক প্রভাব
সোনা ও রুপোর দাম বৃদ্ধি দেশের বাণিজ্য ঘাটতির উপর চাপ ফেলছে, কারণ ভারত বেশিরভাগ সোনা ও রুপো আমদানি করে। উচ্চ দাম মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বাড়াচ্ছে, যা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনার বাজার মূলধন ২০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা এর গুরুত্ব তুলে ধরে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে সোনা ও রুপোর দামে অস্থিরতা থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট গোল্ড ৩,০০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছলে ভারতে দাম আরও বাড়তে পারে। রুপোর দামও শিল্পগত চাহিদার কারণে ১,১৭,০০০ টাকায় পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। তবে, সরকার যদি আমদানি শুল্ক কমায় বা ডলার শক্তিশালী হয়, তবে দামে স্বস্তি আসতে পারে। ভারতে সোনা ও রুপোর দাম আজও বিনিয়োগকারী ও সাধারণ মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উচ্চ দাম সত্ত্বেও এই ধাতুগুলোর প্রতি আকর্ষণ অটুট রয়েছে। আগামী দিনে বাজারের গতিবিধি এবং সরকারি নীতির দিকে সবার নজর থাকবে।