দীপাবলির পর রুপোর (Silver price) বাজারে হঠাৎই ধস নেমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে অতিরিক্ত রুপো সরবরাহই এই পতনের মূল কারণ। ইন্ডিয়া বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (IBJA) জাতীয় মুখপাত্র কুমার জৈন জানিয়েছেন, ভারতের বাজারে রুপোর প্রধান উৎস লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (LBMA)। সম্প্রতি এই সংস্থা বাড়তি পরিমাণ রুপো বাজারে ছেড়েছে, যাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এর ফলেই রুপোর দাম থেমে গিয়ে উল্টো নিম্নমুখী হয়েছে।
দীপাবলির সময় ভারতীয় বাজারে রুপো কেনার প্রবণতা তীব্রভাবে বেড়ে গিয়েছিল। গয়না থেকে শুরু করে সিলভার ETF — বিনিয়োগকারীরা রুপোতে বিনিয়োগে ঝুঁকেছিলেন ব্যাপকভাবে। এই সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ফিনান্স ইনফ্লুয়েন্সার, যেমন সার্থক আহুজা, সোনার তুলনায় রুপোর ১০০-টু-১ রেশিওর তত্ত্ব প্রচার করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরও বাড়ে। এর ফলে বাজারে শারীরিক রুপোর ঘাটতি দেখা দেয়।
ব্লুমবার্গ নিউজের রিপোর্টে জানা গেছে, ভারতের বৃহত্তম প্রিসিয়াস মেটাল রিফাইনারি MMTC-PAMP ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রুপোর স্টক ফুরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় ডিলারদের মধ্যে নিলাম যুদ্ধ শুরু হয়েছে। চাহিদা এতটাই বেশি ছিল যে, ভারতে রুপোর প্রিমিয়াম প্রতি আউন্সে ৫ ডলারেরও বেশি পৌঁছে যায়, যা সাধারণ অবস্থার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
বর্ধিত চাহিদার চাপে ভারতের শীর্ষ মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা — কোটাক এমএফ, ইউটিআই এমএফ এবং এসবিআই এমএফ — তাদের নতুন সিলভার ফান্ড সাবস্ক্রিপশন আপাতত বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী রুপোর সরবরাহ ব্যবস্থাও অস্থির। চীনের সপ্তাহব্যাপী ছুটির কারণে রপ্তানি কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটে, ফলে সরবরাহ কমে যায়। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য নতুন শুল্ক নীতির আশঙ্কায় আগে থেকেই বড় পরিমাণ রুপো পাঠানো হচ্ছে, যা বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে।
ধনতেরাসের পর সোনা ও রুপোর দামে ৫–৬ শতাংশ পর্যন্ত পতন লক্ষ্য করা গেছে। কুমার জৈন জানান, “দীপাবলির কেনাকাটা শেষ, বাজারের উত্তাপ অনেকটাই কমে এসেছে। রুপোর দাম আরও কিছুটা নামার সম্ভাবনা রয়েছে।”
আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে বর্তমানে রুপোর দাম ৫০ ডলারের নিচে নেমে গেছে। বছর শুরুর তুলনায় এখনও রুপোর দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি হলেও, সাম্প্রতিক পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ভারতের বাজারে আজ, ২২ অক্টোবর, প্রতি কেজি রুপোর দাম দাঁড়িয়েছে ১,৬২,০০০ টাকার কাছাকাছি। ধনতেরাসে দেশজুড়ে প্রায় ৩৬,০০০ কোটি টাকার সোনা-রুপো বিক্রি হলেও, উৎসব শেষের পর ক্রেতাদের আগ্রহ অনেকটাই কমেছে।
বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষকদের মতে, রুপো বাজার এখন এক দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যার মুখে। গত পাঁচ বছর ধরে খনি ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। সৌরশক্তি শিল্পে ফোটোভোল্টাইক সেলের জন্য রুপোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে বাজারকে আরও চাপে ফেলতে পারে। ফলে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ বাড়লেও দামের অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।