আয়কর-আরবিআই সেজে ৭ কোটি টাকা লুঠ

বেঙ্গালুরু: শহরের ব্যস্ততম অশোকা পিলার এলাকায় ঘটেছে বছরের সবচেয়ে দুঃসাহসিক ডাকাতি (ATM robbery)। কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক সেজে একটি এটিএম ক্যাশ ভ্যান থামিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা লুঠ করে চম্পট দিয়েছে এক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। ঘটনার পর থেকে কার্যত স্তম্ভিত পুলিশ ও নিরাপত্তা মহল।

Advertisements

ক্যাশ ভ্যানটি সিএমএস লজিস্টিকস-এর ছিল এবং ভ্যানটি সেই সময় এইচডিএফসি ব্যাংকের জেপি নগর শাখার জন্য নগদ টাকা পরিবহণ করছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুষ্কৃতীরা নিজেদের আয়কর দফতর এবং রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)–র কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ক্যাশ ভ্যান থামিয়ে দেয়। তারা ভ্যানের স্টাফদের জানায়, অনুমতি ছাড়া এত বিপুল অঙ্কের নগদ পরিবহণ আইনবিরোধী, তাই জরুরি নথি পরীক্ষা করতে হবে।

   

এই অজুহাতে দুষ্কৃতীরা ভ্যানের কর্মীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং ড্রাইভারকে নির্দেশ দেয়, ‘নথি যাচাইয়ের’ জন্য গাড়িটি সামনে নিতে। এরপরই চক্রটি পরিকল্পনা অনুযায়ী ড্রাইভারকে ডেয়ারি সার্কেলের কাছে একটি নির্জন জায়গায় নামিয়ে দেয় এবং ভ্যানের ভেতরে থাকা নগদ টাকা অন্য একটি টয়োটা ইনোভা গাড়িতে তুলে নেয়। ইনোভা গাড়ির সামনে থাকা Government of India স্টিকারটিও ছিল ভুয়ো বলে পরে জানা যায়। টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়িটি দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখে, সেই ইনোভা গাড়িটি কোলার টোল প্লাজা পেরিয়ে গেছে। তবে গাড়িটির নম্বরপ্লেটটি নকল, যা তদন্তকে আরও জটিল করছে। পুলিশের ধারণা, পুরো অপারেশনটি ছিল সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত, এবং চক্রটির সদস্যরা নগদ পরিবহণের রুট এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে আগেই তথ্য জোগাড় করেছিল।

বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশ কমিশনার সীমন্ত কুমার সিং জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে প্রায় ₹৭ কোটি টাকার লুঠ হয়েছে। সঠিক পরিমাণ যাচাই করা হচ্ছে। আমরা একাধিক বিশেষ দল তৈরি করেছি এবং তারা মাঠে নেমে তদন্ত চালাচ্ছে। দুই জন ডি.সি.পি., একজন জয়েন্ট কমিশনার এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইউনিট একসঙ্গে কাজ করছে। খুব দ্রুতই আমরা পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পারব।

Advertisements

তদন্তে আরও উঠে এসেছে, একটি মারুতি জেন গাড়িও এই অপরাধে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সন্দেহ। ধারণা করা হচ্ছে, পালানোর সময় বিভ্রান্তি তৈরি করতে দলটি একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেছে।

এদিকে এই ঘটনার পর নগদ পরিবহণকারী সংস্থা ও ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি আধিকারিক সেজে অপরাধ ঘটানোর ঘটনাটি নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং নজরদারির অভাবকে সামনে এনে দিয়েছে।

বর্তমানে কোলার, হোসকোটে, মালুর এবং বেঙ্গালুরুর সব গুরুত্বপূর্ণ রুটে নাকা চেকিং চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র তাদের হাতে এসেছে এবং শীঘ্রই এই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

এই দুঃসাহসিক ছদ্মবেশী ডাকাতির ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যাংক ও লজিস্টিক সংস্থাগুলির মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। নগদ বহনের ক্ষেত্রে কড়া নিরাপত্তা গাইডলাইন আনার কথাও ভাবছে প্রশাসন।