ভোটের আগে ফ্রি বিদ্যুৎ ঘোষণা, ‘দিল্লি মডেল’ চালু করার চেষ্টায় জোর চর্চা

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের একবার বড়সড় ভোটকেন্দ্রিক ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। এবার তিনি ঘোষণা করলেন, রাজ্যের প্রতিটি গার্হস্থ্য গ্রাহক…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/Nitish-1.jpg

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের একবার বড়সড় ভোটকেন্দ্রিক ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। এবার তিনি ঘোষণা করলেন, রাজ্যের প্রতিটি গার্হস্থ্য গ্রাহক আগামী ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে প্রতি মাসে ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পাবেন। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া X (প্রাক্তন টুইটার)-এ এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা করেন প্রবীণ এই জননেতা।

নীতীশ কুমারের কথায়, “আমরা শুরু থেকেই বিহারের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এসেছি। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে – অর্থাৎ জুলাই মাসের বিলিং সাইকেল থেকেই – রাজ্যের সমস্ত গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ গ্রাহক ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের জন্য কোনও মূল্য দেবেন না।” তিনি আরও জানান, এই ঘোষণার ফলে বিহারের ১.৬৭ কোটি পরিবার উপকৃত হবেন।

   

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণা নিছকই একটি জনসেবামূলক উদ্যোগ নয়, বরং এর পিছনে রয়েছে নির্বাচনী কৌশল। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাস নাগাদ বিহারে ২৪৩টি বিধানসভা আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে জনগণের মন পেতে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এক কোটি চাকরি, মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত ভর্তুকি, সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ—এইসবের পর এবার ফ্রি বিদ্যুৎ।

এই পদক্ষেপকে অনেকে ‘দিল্লি মডেল’ বলে উল্লেখ করছেন। কারণ, দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার দীর্ঘদিন ধরে গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নির্দিষ্ট ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ মকুব করে আসছেন। ঠিক একই পথেই এবার হাঁটলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisements

নির্বাচনের আগে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তা ঘিরেই তৈরি হয়েছে প্রবল বিতর্ক। সূত্র অনুযায়ী, প্রায় ৩৫ লক্ষ ভোটারের নাম ইতিমধ্যেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ তুলেছে, এটা একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত—যার মাধ্যমে প্রান্তিক শ্রেণীর, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

ইন্ডিয়া জোটের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন প্রথমে আধার কার্ড, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড ইত্যাদি পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে রাজি ছিল না। যার ফলে বহু নাগরিক নিজেদের পরিচয় প্রমাণে সমস্যায় পড়েন। এই ইস্যু সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। যদিও শীর্ষ আদালত ভোটার তালিকা সংশোধনের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়নি, তবে নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছে—আধার, রেশন কার্ড এবং ভোটার আইডির মতো পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে হবে।

একদিকে নির্বাচনের আগে ‘উপহার’ রাজনীতির খেলা, অন্যদিকে ভোটার তালিকা থেকে নাগরিকদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ—এই দুইয়ের মধ্যে বিহার যেন ক্রমশ রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। নীতীশ কুমারের এই বিদ্যুৎ ঘোষণায় কতটা ভোট প্রভাবিত হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত ভোটের মুখে রাজনীতির দাবা বোর্ডে একের পর এক চাল চালেই চলেছেন তিনি।