ভারতের উপরাষ্ট্রপতি (Vice President) নির্বাচনের জন্য বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি. সুদর্শন রেড্ডিকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা গত ১৯ আগস্ট, ২০২৫-এ সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
বিচারপতি রেড্ডি, যিনি তেলেঙ্গানার বাসিন্দা এবং ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি এই নির্বাচনে এনডিএর প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই নির্বাচন ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বিচারপতি বি. সুদর্শন রেড্ডি ১৯৪৬ সালের ৮ জুলাই তেলেঙ্গানার রাঙ্গারেড্ডি জেলার আকুলা মাইলারাম গ্রামে একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হায়দ্রাবাদে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৭১ সালে ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হন এবং অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কে. প্রতাপ রেড্ডির অধীনে কাজ শুরু করেন।
তিনি নাগরিক এবং সাংবিধানিক বিষয়ে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টে সরকারি প্লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং কিছু সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল হিসেবেও কাজ করেন।
১৯৯৩ সালে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট অ্যাডভোকেটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৫ সালের ২ মে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৫ সালে গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন। ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০১১ সালের ৮ জুলাই অবসর গ্রহণ করেন।
তাঁর সুপ্রিম কোর্টে থাকাকালীন তিনি ফৌজদারি আইন, সাংবিধানিক আইন, কর, পরিষেবা আইন এবং মানবাধিকারের বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন। বিশেষ করে, অবৈধভাবে বিদেশে রাখা কালো টাকার তদন্তে কেন্দ্রীয় সরকারের শিথিলতার জন্য তিনি সমালোচনা করেন এবং একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠনের নির্দেশ দেন।
অবসরের পর, ২০১৩ সালে তিনি গোয়ার প্রথম লোকায়ুক্ত হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে তাঁর এই নিয়োগ নিয়ে বিরোধী দলগুলো প্রশ্ন তুলেছিল, দাবি করে যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর “হ্যাঁ-সূরী” ব্যক্তি। তবে বিচারপতি রেড্ডি স্পষ্ট করেন যে তিনি গোয়ায় কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না এবং তিনি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। ২০২২ সালে, তিনি কর্ণাটকের খনি অঞ্চলে পরিবেশ পুনরুদ্ধার এবং সমাজ-অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তদারকির দায়িত্ব পান।
বিরোধী জোটের এই প্রার্থী ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা তুঙ্গে। কেউ কেউ বলছেন, বিচারপতি রেড্ডির মতো একজন অভিজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্বের প্রার্থিত্ব বিরোধী জোটের জন্য শক্তি যোগাবে। অন্যদিকে, কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন যে এই নির্বাচনে এনডিএ-র শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছে বিরোধী দলের প্রার্থী কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে এই প্রার্থিত্ব নিয়ে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে তাঁর আঞ্চলিক পরিচিতির কারণে।এই নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণনের সমর্থনে বিজেপি এবং তার মিত্র দলগুলো সংসদে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
সূত্র জানায়, এনডিএ ইতিমধ্যেই ওয়াইএসআর কংগ্রেসের প্রধান জগনমোহন রেড্ডির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য। তবে বিরোধী জোট আশা করছে যে তাদের প্রার্থী বিজেপি থেকে ক্রস-ভোটিংয়ের মাধ্যমে সমর্থন পেতে পারেন।
বিচারপতি রেড্ডির প্রার্থিত্ব নিয়ে তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মানুষের মধ্যে গর্বের অনুভূতি দেখা যাচ্ছে। তিনি এই অঞ্চলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তাঁর আইনি ও বিচারিক অভিজ্ঞতা এবং নিরপেক্ষতার জন্য তিনি সুপরিচিত। তবে এই নির্বাচন কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে চড়ছে রাজনীতি
বিরোধী দলের নেতারা আশা করছেন যে বিচারপতি রেড্ডির মতো একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের প্রার্থিত্ব তাদের জোটের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এই ঘোষণা ভারতের রাজনীতিতে নতুন গতি এনেছে। সবার দৃষ্টি এখন নির্বাচনের ফলাফলের দিকে। বিচারপতি রেড্ডির প্রার্থিত্ব কীভাবে ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলবে।