নয়াদিল্লি: এ যেন পুরো সিনেমার মত সাজানো খুনের (Murder) ঘটনা! চলতি মাসেই ৩২ বছর বয়সী UPSC ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর জট খুলল দিল্লি পুলিশ। দিল্লির গান্ধী বিহারের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছিল রমেশ মীনা নামক ওই ছাত্রের পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছাত্রের। কিন্তু তদন্তে নেমে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার অমৃতা চৌহান (২১)-কে গ্রেফতার করল পুলিশ।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে দিল্লির গান্ধী বিহারের একটি আবাসনে লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন মীনা ও অমৃতা। কিন্তু সম্পর্কের কিছুদিনের মধ্যেই অমৃতা বুঝতে পারেন যে মীনা লুকিয়ে তাঁর গোপন ভিডিও তুলে রাখছে। মীনাকে ভিডিও গুলো ডিলিট করতে বলার একাধিকার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কোনও লাভ হয়নি। সেখান থেকেই তাঁদের সম্পর্কে শুরু হয় এক অন্ধকার অধ্যায়।
মীনার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পুরনো প্রেমিক সুমিত কাশ্যপ (২৯)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন অমৃতা। LPG গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটর সুমিত ও তাঁদের আরও এক বন্ধু সন্দীপকে সঙ্গে নিয়ে মীনাকে খুনের পরিকল্পনা করেন অমৃতা। ঘটনার তদন্তে থাকা ডিসিপি (উত্তর) রাজা বান্থিয়া জানিয়েছেন, গত ৫ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের বাসিন্দা ওই তিনজন দিল্লিতে মীনার ফ্ল্যাটে আসেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দুই মুখোশধারী ব্যক্তি গান্ধী বিহারের ওই আবাসনে প্রবেশ করছেন। তার কিছুক্ষণ পর প্রবেশ করেন অমৃতা। রাত ২:৫৭ নাগাদ অমৃতা সহ এক ব্যক্তি আবাসন থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পরেই, অ্যাপার্টমেন্টে একটি বিস্ফোরণ ঘটে। আগুন লাগার খবর পেয়ে আবাসনে ছুটে যায় পুলিশ (Delhi Police)। সেখানে তাঁরা মীনার সম্পূর্ণ দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেন। প্রথমে তদন্তকারীরা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট অথবা এসি বিস্ফোরণের সন্দেহ করেছিলেন, কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ এবং পোড়ার ধরণ দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের।
অমৃতার খোঁজে তদন্ত শুরু করে পুলিশ
আবাসনের সিসিটিভি ফুটেজ ও ঘটনার সময় অমৃতার মোবাইল লোকেশন অপরাধস্থলের কাছাকাছি দেখায়। এরপর তাঁর কল ডিটেইল রেকর্ড দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও পোক্ত হয়। অমৃতাকে মোরাদাবাদ জুড়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে ১৮ অক্টোবর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, সে খুনের কথা স্বীকার করে এবং জানায় যে সে, সুমিত এবং সন্দীপ মীনাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওয়েবসিরিজ দেখে মীনাকে খুনের ছক কষে অমৃতা ও তাঁর পুরনো প্রেমিক
পুলিশ সূত্রে খবর, ক্রাইম ওয়েব সিরিজের ভক্ত ফরেন্সিক ছাত্রী অমৃতা LPG ডিস্ট্রিবিউটর সুমিত বিস্ফোরণ এবং খুন করে প্রমাণ লোপাটের অর্ধজ্ঞান নিয়েই মীনাকে খুনের পরিকল্পনা করে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে খুনকে দুর্ঘটনা বলে সাজানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। পালানোর আগে, সন্দেহ এড়াতে লোহার গেটের একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে ফ্ল্যাটটি ভেতর থেকে তালাবদ্ধ করে তিনজন। কয়েক মিনিট পরেই বিস্ফোরণ ঘটে। প্রমাণ লোপাট করতে তাঁরা মীনার হার্ডডিস্ক, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়, বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ হেফাজতে মীনা সহ আরও দুই
স্বীকারোক্তির পর, পুলিশ অভিযুক্তের কাছ থেকে একটি হার্ড ডিস্ক, একটি ট্রলি ব্যাগ, মীনার শার্ট এবং দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সুমিতকে ২১ অক্টোবর এবং সন্দীপকে ২৩ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুজনেই তাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তিমারপুর থানার ইন্সপেক্টর পঙ্কজ তোমার তদন্তের নেতৃত্ব দেন। হত্যা, ষড়যন্ত্র এবং প্রমাণ ধ্বংস সম্পর্কিত ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে অমৃতা, সুমিত ও সন্দীপ পুলিশি হেফাজতে রয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে।

