বিমান টিকিট ফেরত নিয়ে দীর্ঘদিনের যাত্রী অসন্তোষের জবাবে অবশেষে কড়া অবস্থান নিল ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA)। ক্রমবর্ধমান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি প্রস্তাব করেছে একগুচ্ছ নতুন ও কঠোর নিয়ম, যা কার্যকর হলে যাত্রীদের টাকা ফেরত হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও ঝামেলামুক্ত।
অসন্তোষের তিন কেন্দ্র
ডিজিসিএ জানিয়েছে, যাত্রীদের মূল অভিযোগ ঘিরে তিনটি বড় সমস্যা—
* টিকিট ফেরতের অযৌক্তিক দেরি,
*ফেরতের অঙ্ক অন্যায্যভাবে কমিয়ে দেওয়া,
*নগদ ফেরতের বদলে জোর করে ‘ক্রেডিট শেল’ বা ভাউচার দেওয়া।
- সংস্থার ভাষায়, “একাধিক বৈঠকের পরও বিমান সংস্থাগুলির আচরণে কোনও পরিবর্তন আসেনি।” তাই এবার বাধ্য হয়েই নির্ধারিত হচ্ছে ন্যূনতম রিফান্ড মানদণ্ড, যা মানতে হবে ভারতের সব বিমান সংস্থাকেই।
 
নতুন খসড়া নির্দেশিকার মূল দিকগুলি
সংশোধিত Civil Aviation Requirements (Section 3 – Air Transport, Series ‘M’, Part II) অনুযায়ী—
- ট্রাভেল এজেন্ট বা পোর্টালের মাধ্যমে কেনা টিকিটের ফেরত দিতে হবে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে।
 - নন-রিফান্ডেবল ভাড়াতেও বিমানবন্দর ট্যাক্স ও ফি সম্পূর্ণ ফেরত দিতে হবে।
 - ৪৮ ঘণ্টার ‘লুক-ইন’ পিরিয়ডে টিকিট বাতিল বা পরিবর্তন করা যাবে বিনা খরচে।
 - ক্রেডিট শেল কেবলমাত্র যাত্রীর অনুরোধে জারি করা যাবে, ডিফল্ট হিসেবে নয়।
 - বাতিলের ফি বুকিংয়ের সময়েই স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
 - জরিমানা কখনওই বেসিক ভাড়া ও ফুয়েল সারচার্জের বেশি হতে পারবে না।
 - রিফান্ড প্রক্রিয়াকরণের জন্য আলাদা ফি নেওয়া নিষিদ্ধ।
 - ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বানান ভুল জানালে নাম সংশোধন বিনামূল্যে করতে হবে।
 - ক্রেডিট কার্ডে বুকিংয়ের ক্ষেত্রে টাকা ফেরত দিতে হবে ৭ দিনের মধ্যে,
*আর ক্যাশ টিকিটের ক্ষেত্রে ফেরত দিতে হবে তাৎক্ষণিকভাবে। - বিদেশি বিমান সংস্থাগুলিকেও ভারতের নির্ধারিত রিফান্ডের সময়সীমা ও প্রক্রিয়া মানতে হবে।
 
চিকিৎসা-জনিত ছাড়ের বিধান
চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি কারণে টিকিট বাতিল হলে যাত্রী পাবেন সম্পূর্ণ ফেরত বা ক্রেডিট শেল— দুয়ের মধ্যে নিজের পছন্দমতো বিকল্প।
“বাধ্য হয়েই হস্তক্ষেপ”: ডিজিসিএ
ডিজিসিএ স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা সাধারণত বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করে না, কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিযোগ ও অসহযোগিতার কারণে এবার বাধ্য হয়েই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।
খসড়া নির্দেশিকা জারি করেছেন সংস্থার মহাপরিচালক ফয়জ আহমেদ কিদওয়াই, যিনি বলেছেন— যাত্রীদের অধিকার ও আস্থা রক্ষাই এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য। মতামত গ্রহণের পরই নতুন নীতিটি চূড়ান্ত আকার পাবে।
ডিজিসিএ-র এই উদ্যোগ কার্যকর হলে ভারতের বিমানযাত্রীদের জন্য এটি হবে এক নতুন আস্থার অধ্যায়— যেখানে ফেরত প্রক্রিয়া হবে নির্ভরযোগ্য, দ্রুত এবং যাত্রীকেন্দ্রিক। এক কথায়, দেশের আকাশপথে এবার শুরু হচ্ছে স্বচ্ছতার উড়ান।


