সরকারি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, উদ্ধার ১৯০-এর বেশি রোগী

গোয়ালিয়র, ১৬ মার্চ ২০২৫: মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র (Gwalior) শহরের কমলা রাজা হাসপাতালে রবিবার ভোরে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই সরকারি হাসপাতালটি গজরা রাজা মেডিকেল কলেজের…

Fire Breaks Out in Gwalior Hospital

short-samachar

গোয়ালিয়র, ১৬ মার্চ ২০২৫: মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র (Gwalior) শহরের কমলা রাজা হাসপাতালে রবিবার ভোরে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই সরকারি হাসপাতালটি গজরা রাজা মেডিকেল কলেজের অংশ। আগুনের সূত্রপাত হয় গাইনোকোলজি বিভাগের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) থাকা একটি এয়ার কন্ডিশনারে। ঘটনাটি ঘটে ভোর ১টার দিকে। তবে স্বস্তির বিষয় হলো, এই ঘটনায় কোনও প্রাণহানি হয়নি। দ্রুত পদক্ষেপের ফলে হাসপাতালে থাকা ১৯০-এর বেশি রোগীকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

   

গোয়ালিয়রের জেলা কালেক্টর রুচিকা চৌহান জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত হয় আইসিইউ-তে থাকা একটি এসি ইউনিটে। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আগেই হাসপাতালের কর্মীরা এবং উদ্ধারকারী দল তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে। আইসিইউ-তে থাকা ১৩ জন রোগীসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মোট ১৯০-এর বেশি রোগীকে নিরাপদে স্থানান্তরিত করা হয়। রোগীদের বেশিরভাগই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছেন। আগুন লাগার পর ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। তবে সময়মতো উদ্ধার কাজ শুরু হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোর ১:৩০ থেকে ২টার মধ্যে হাসপাতালের বাইরে ঘুমন্ত মানুষজন যখন ডাক্তার ও কর্মীদের চিৎকার শুনতে পান, তখনই আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমাদের রোগী আইসিইউ-তে ছিল। হঠাৎ চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। জানালা দিয়ে দেখি, ভিতরে রোগীরা আটকে পড়েছে। আমরা একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে জানালার কাচ ভেঙে ধোঁয়া বের করার চেষ্টা করি এবং উদ্ধারে সাহায্য করি।” হাসপাতালের কর্মীরাও দ্রুত রোগীদের বের করে আনতে সহায়তা করেন।

গোয়ালিয়র পৌরসংস্থার ফায়ার অফিসার অতিবল সিং যাদব জানান, আগুনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছয়টি ফায়ার স্টেশনকে সতর্ক করা হয়। দুটি ফায়ার টেন্ডার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি বলেন, “আমরা তথ্য পেয়েছিলাম যে লেবার রুমে আগুন লেগেছে। কাছাকাছি ফায়ার টেন্ডারগুলো তৎক্ষণে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।” উপ-বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ভিনোদ সিং জানান, “গাইনোকোলজি ইউনিটে আগুন লাগে। সেখানে প্রায় ২২ জন রোগী ছিল। ধোঁয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সমস্ত রোগীদের দ্রুত সরিয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কোনও প্রাণহানি হয়নি।”

এই ঘটনা কমলা রাজা হাসপাতালের অবকাঠামোগত সমস্যার দিকে আঙুল তুলেছে। জানা গেছে, আগুনের কারণ ছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। গত ডিসেম্বরেও এই হাসপাতালের শিশু আইসিইউ-তে একটি আগুনের ঘটনা ঘটেছিল, যা শর্ট সার্কিটের কারণেই হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের পুরনো বৈদ্যুতিক তার এবং অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এই ধরনের ঘটনার জন্য দায়ী। ৪৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি সরকারি তহবিলে একটি ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে এখানে পর্যাপ্ত ডাক্তারের অভাব, চিকিৎসা সরঞ্জামের সমস্যা এবং অবকাঠামোর উন্নতির দাবি উঠে আসছে।

এই ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আগুনের সঠিক কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তদন্ত চলছে। রোগীদের ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট ডা. রীতা মিশ্র বলেন, “আমি একজন ডাক্তারের কাছ থেকে আগুনের খবর পাই। পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছিল, তবে দ্রুত সবাইকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।”
এই ঘটনা হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে। স্থানীয়রা মনে করেন, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। প্রশাসনের কাছে এখন দাবি উঠেছে হাসপাতালের অবকাঠামো সংস্কার এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য।