শনিবার অসমের কাছার জেলায় ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। শিলং থেকে তিনসুকিয়া যাওয়ার পথে এই ট্রেনের চাকা থেকে হঠাৎ আগুনের ফুলকি বের হতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরেই তা ছড়িয়ে পড়ে স্লিপার কোচে, যা যাত্রীদের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক তৈরি করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত যাত্রীরা দিশাহারা হয়ে পড়েন, এবং অনেকেই তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন।
ট্রেনটি তখন বিহারা রেলস্টেশনে পৌঁছেছিল। আগুনের ঘটনাটি দেখতে পেয়ে আতঙ্কিত যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। তাদের সাড়া পেয়ে দ্রুত সেখানে উপস্থিত হন রেলওয়ে পুলিশ ও স্টেশনের কর্মীরা। তারা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান। প্রায় ৪৫ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে এই সময়ের মধ্যে ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল।
গুরুতর দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়নি যাত্রীরা, তবে ভাগ্যক্রমে একটি মাত্র স্লিপার কোচেই আগুন লাগেছিল এবং অন্য কোচগুলো নিরাপদ ছিল। রেলের এক আধিকারিক জানান, এই দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে, যা বর্তমানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করতে শুরু করেছে।
এই ঘটনা শুধু ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে নয়, সম্প্রতি আরো একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গতকাল নিউ জলপাইগুড়ি থেকে চেন্নাইগামী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে ট্রেনের ইঞ্জিনের তলায় কয়েকটি যন্ত্রাংশ খুলে যায়। চালকের সতর্কতা এবং দ্রুত ব্রেক কষার কারণে বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীরা রক্ষা পান। এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে।
এছাড়া, গত ২২ জানুয়ারি পুস্পক এক্সপ্রেসে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনে আগুন লাগার গুজব রটায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে ট্রেনের চেইন টেনেছিলেন। এতে ট্রেনটি থেমে যাওয়ার পর, পাশ থেকে আসা আরেকটি ট্রেন তাদের ধাক্কা মারে। এই দুর্ঘটনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয় এবং একাধিক যাত্রী আহত হন। এমন ঘটনা রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের আগুন লাগা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা সাধারণ জনগণের মধ্যে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষত, ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, যা রেল কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় সতর্কতা সংকেত।
এখনো পর্যন্ত যে সব দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে যাত্রীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।