সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব সোমবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী (yogi) আদিত্যনাথের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, যোগী (yogi) আদিত্যনাথ কৃষকদের সঙ্গে মাটির স্তরে সাক্ষাৎ করার সাহস না দেখিয়ে আকাশ থেকে ফসলের জরিপ করেছেন। রবিবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী ভুট্টার ফসলের একটি আকাশপথে জরিপ পরিচালনা করেছিলেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অখিলেশ যাদব সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে যোগী (yogi) আদিত্যনাথের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এটি সময়ের অভাব নয়, বরং জনগণের ক্ষোভের ভয়ই মুখ্যমন্ত্রীকে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে বাধা দিয়েছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, কৃষকরা তাদের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন, কিন্তু সরকার তাদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে এমন প্রদর্শনমূলক কাজে ব্যস্ত রয়েছে।
কৃষকদের ক্ষোভ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
উত্তরপ্রদেশের কৃষক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন(Yogi)। ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, সেচের অভাব, সার ও বীজের উচ্চ মূল্য, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতি তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর আকাশপথে জরিপকে অনেকে কৃষকদের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে দেখছেন। অখিলেশ যাদবের এই মন্তব্য রাজ্যের কৃষকদের মধ্যে থাকা ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।
অখিলেশ তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, “কৃষকরা মাটিতে দাঁড়িয়ে তাদের সমস্যার কথা বলতে চান, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী (yogi) আকাশে উড়ে তাদের দুর্দশা দেখার চেষ্টা করছেন। এটা কি তাদের সমস্যার সমাধান করবে?” তিনি সরকারের কাছে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, সরকারের উচিত কৃষকদের সমস্যা শোনা এবং তাদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
যোগী সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া
যোগী আদিত্যনাথের (yogi) আকাশপথে জরিপের পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিল ফসলের অবস্থা এবং কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নের সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করা। সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই জরিপের মাধ্যমে তিনি রাজ্যের কৃষি খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন।” তবে, এই ব্যাখ্যা সমাজবাদী পার্টি বা কৃষক সংগঠনগুলির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।
কৃষক নেতারা বলছেন, আকাশ থেকে ফসল দেখে কৃষকদের সমস্যা বোঝা সম্ভব নয়। তারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মাটির স্তরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানিয়েছেন। একজন কৃষক নেতা বলেন, “আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী আমাদের গ্রামে এসে আমাদের কথা শুনুন। আকাশ থেকে জরিপ করে কিছুই হবে না।”
কয়েকদিন পর বন্ধ হবে গোরুমারা, শেষ মুহূর্তে গোরুমারা জঙ্গলে ভিড় পর্যটকদের
রাজনৈতিক প্রভাব
এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশের (yogi) রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। সমাজবাদী পার্টি এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে যোগী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। অখিলেশ যাদবের এই মন্তব্যের পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সমাজবাদী পার্টির নেতা-কর্মীরা কৃষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের সমস্যা শোনার উদ্যোগ নিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা অখিলেশের এই মন্তব্যকে রাজনৈতিক স্বার্থপরতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, যোগী সরকার কৃষকদের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কৃষক সম্মান নিধি, সেচ প্রকল্প এবং ফসল বীমা। তবে, কৃষকদের একাংশ এই প্রকল্পগুলির সুফল সঠিকভাবে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন।
কৃষকদের দাবি ও ভবিষ্যৎ
উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য, ঋণ মকুব, এবং সেচ ও সারের জন্য সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়ে আসছেন। গত কয়েক বছরে কৃষক আন্দোলন রাজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। ২০২০-২১ সালের কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলনের পর থেকে কৃষকরা আরও সংগঠিত হয়েছেন এবং তাদের দাবি নিয়ে সরব হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে যোগী আদিত্যনাথের (yogi) আকাশপথে জরিপ কৃষকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি সরকারের অগ্রাধিকারের অভাবকে প্রকাশ করে। অখিলেশ যাদব এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে কৃষক ইস্যু সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগী আদিত্যনাথের(yogi) আকাশপথে ফসল জরিপ এবং অখিলেশ যাদবের তীব্র সমালোচনা এই ইস্যুকে আরও সামনে এনেছে। আগামী দিনে সরকার কীভাবে কৃষকদের সমস্যার সমাধান করে এবং সমাজবাদী পার্টি কীভাবে এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগায়, তা রাজ্যের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে।
কৃষকরা এখনও আশা করছেন যে, তাদের কথা শোনা হবে এবং তাদের সমস্যার সমাধান হবে। তবে, এই ঘটনা উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জটিলতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।