গুলিয়ান বেরিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিখ্যাত লেখিকা, জানালেন এ থেকে বাঁচার উপায়

‘Gullain Barre Syndrome’ এই রোগের নাম গত ২ দিনে দেশের মানুষের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিখ্যাত লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায়ও। ২০২৩ সালেই…

Debarati Mukhopadhyay

short-samachar

‘Gullain Barre Syndrome’ এই রোগের নাম গত ২ দিনে দেশের মানুষের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বিখ্যাত লেখিকা দেবারতি মুখোপাধ্যায়ও। ২০২৩ সালেই তিনি এতে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে খুব কষ্ট করে তিনি ফিরে এসেছিলেন। এ নিয়েই তিনি জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

   

তিনি বলেছেন, ‘এই ভয়ংকর রোগটির নাম প্রথম শুনেছিলাম বছর ছয়েক আগে। আমার এক পরিচিত বন্ধুর হয়েছিল। তার আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছিল, তিন মাস ভেন্টিলেশনে ছিল সে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে তখন সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা অনেকেই পোষ্ট করেছিলাম। তখন ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি, একদিন এই উটকো অসুখেও আমাকেও ঢুকতে হবে ভেন্টিলেশনে, সহ্য করতে হবে অপরিসীম যন্ত্রণা, অসাড় হয়ে যাবে প্রায় সর্বাঙ্গ, তিনমাস পরেও সেই রোগ পিছু ছাড়বে না। ঈশ্বরের অসীম কৃপায় আজ আমার সেই বন্ধু রাণু অনেকটাই সুস্থ, কিন্তু তার স্বামী আজও এই রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছেন। আমার অসুখ সম্পর্কে জেনে আমায় তিনি সাহস জোগানো, অভিজ্ঞতা শেয়ারিং এর পাশাপাশি যুক্ত করেছিলেন গুলেন ব্যারি নেটওয়ার্কে। সেখান থেকে ভীষণ উপকার পেয়েছি। আবারও বলি, আমার নিউরোলজিস্টের মতে, কোভিড পরবর্তী দুনিয়ায় এই জাতীয় অটো ইমিউন অসুখ ক্রমশ বাড়ছে। এগুলো এমন অসুখ যাতে শরীরের সুস্থ কোষগুলো শত্রুমিত্র চিনতে না পেরে নিজেদেরই ধ্বংস করতে থাকে ( একজন নন মেডিকেল পার্সন হিসেবে আমায় এভাবেই বোঝানো হয়েছে)। সামান্থা বা টাইটানিকের বিখ্যাত গানটির গায়িকা সেলেন ডাইওনও এই রোগের শিকার।

এই রোগটি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা এখনো খুব কম। অনেকেই রোগ নির্ণয়ের আগেই মারা গেছেন। আমার হাসপাতাল থেকে ফেরত আসার কয়েকদিন পরেই শ্রীরামপুরের একজন মারা গিয়েছিলেন, যার বাড়ির লোক ভেবেছিলেন, তাঁর বুঝি প্রেশার বেড়েছে। আমার নিজের ক্ষেত্রেও স্থানীয় ডাক্তার সেটাই ভেবেছিলেন। আমি নিজে জোর করে হাসপাতালে না গেলে ২০২৩ সালটা আমার আর দেখা হত না। যাইহোক, এই অসুখের লক্ষণ ও নিরাময়গুলো লিখি।

গুলেন ব্যারি সিন্ড্রোম অসুখের লক্ষণ:
পা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অবশ ভাব ওপরের দিকে ছড়ায়। ধীরে ধীরে গোটা শরীরই প্যারালিসিস হয়ে যাবে। ফুসফুস অ্যাটাক করলে তখন ভেন্টিলেশনে না দিলে রোগী হার্ট ফেইল করে।

অসুখের কারণঃ এখনো নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।যে কোন বয়সে যে কোন মানুষের হতে পারে। তবে, আধ সেদ্ধ চিকেন বা নতুন কোন ভ্যাক্সিন থেকে এই অসুখ হয় সবচেয়ে বেশি। দিনদিন এই রোগ বাড়ছে। মেরুদণ্ড ফুটো করে মজ্জা নিয়ে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক লাম্বার পাংচার টেস্ট করে এই অসুখ ধরা পড়ে।

অসুখের ট্রিটমেন্ট: ‘IVIG’ অথবা প্লাজমা থেরাপি। দুটোই খুব ব্যয়বহুল। সময়ে এই ট্রিটমেন্ট না শুরু হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ট্রিটমেন্টের পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সুস্থ হতে ছ’মাস লেগে যায়। আমার তিনমাস হতে চলল, এখনো সুস্থ নই! ফাইন মুভমেন্টে, ব্যালান্স রাখতে ভীষণ সমস্যা। ফিজিওথেরাপি চলছে তবু।

এই কাল অসুখ জীবন পালটে দেয়। আমারও দিয়েছে। একবার করে যেই সব ঝেড়েঝুরে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছি, বাইরে বেরোচ্ছি, পরের দিনই অসাড় ভাব বেড়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দিচ্ছে। সারাজীবনের মত মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে কোন মুহূর্তে আবার রিল্যাপ্স করার, আবার জীবন্মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছনোর। চেষ্টা থাকলেও বেশি পরিশ্রম করতে পারছি না, হয়ত আর কোনদিনই পারব না। এই অসুখকে আমেরিকায় ডিসেবিলিটি-র আওতায় আনা হয়েছে, ভারতে সেই সচেতনতা এখনো নেই।

তবু মনের জোর রাখতে হবে। অসুখ কখনোই লজ্জার/সংকোচের নয়। আমার অসুখের বিশদ থেকে যদি একজনও দেরি হওয়ার আগে সচেতন হন, সেটাই উদ্দেশ্য। সারা পৃথিবীর জি বি সিন্ড্রোম রুগীরা এই নেটওয়ার্কে আছেন, আপনাদের পরিচিত কারুর এই অসুখ হলে বা এইসব লক্ষণ দেখা দিলে এই নেটওয়ার্কে প্লিজ যোগ হতে বলবেন ‘https://www.facebook.com/groups/2379559053/’ এখানে চিকিৎসা থেকে সচেতনতা সব হেল্প পাওয়া যাবে।’