‘দুঃখ-কষ্টে’ কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা সাংসদ আহমেদ প্যাটেল পুত্রের

কংগ্রেসের প্রাক্তন সংসদ সদস্য আহমেদ প্যাটেলের (Ahmed Patel) পুত্র ফয়সাল প্যাটেল (Faisal Patel) বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন।…

Ahmed Patel son Faisal Patel

কংগ্রেসের প্রাক্তন সংসদ সদস্য আহমেদ প্যাটেলের (Ahmed Patel) পুত্র ফয়সাল প্যাটেল (Faisal Patel) বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। গভীর দুঃখ ও হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, “কংগ্রেসের জন্য আর কাজ করবেন না।” সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বে টুইটার) এ এক আবেগপূর্ণ পোস্টে তিনি জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর যাত্রা ছিল অত্যন্ত কঠিন এবং যদিও তিনি তাঁর প্রয়াত পিতার পথ অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন, তবুও বারবার তাঁকে দলের অগ্রগতিতে অবহেলা করা হয়েছে।

ফয়সাল প্যাটেলের আবেগপূর্ণ ঘোষণা
ফয়সাল প্যাটেল তাঁর এক্স পোস্টে বলেন, “বড় কষ্ট ও দুঃখের সঙ্গে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কংগ্রেসের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দেব। এটি অনেক বছরের কঠিন যাত্রা ছিল। আমার প্রয়াত বাবা আহমেদ প্যাটেল তাঁর পুরো জীবন দেশ, দল এবং গান্ধী পরিবারের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। আমি তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপে আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। আমি মানবতার জন্য যেকোনোভাবে কাজ করতে থাকব। কংগ্রেস দল আমার পরিবার হিসেবে চিরকাল থাকবে। আমি কংগ্রেসের সব নেতা, কর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাকে সমর্থন করেছেন।”

   

ফয়সাল প্যাটেলের এই পোস্টের মাধ্যমে, তিনি কংগ্রেসের প্রতি তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক এবং দলের মধ্যে তার অভিজ্ঞতার প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তাঁর পিতা আহমেদ প্যাটেল ছিলেন কংগ্রেসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু এই দীর্ঘ যাত্রায়, ফয়সাল নিজেকে প্রায়শই উপেক্ষিত ও অবহেলিত মনে করেছেন, যার কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন।

আহমেদ প্যাটেলের অবদান ও ফয়সালের যাত্রা
আহমেদ প্যাটেল ছিলেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি দীর্ঘ সময় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক, রাজস্থানের সাংসদ এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন। তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ শুধুমাত্র ভারতীয় রাজনীতির জন্য নয়, কংগ্রেসের জন্যও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অবদান কংগ্রেসে অনস্বীকার্য, এবং তাঁর মৃত্যু ভারতীয় রাজনীতিতে একটি বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে।

ফয়সাল প্যাটেল তাঁর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করার পর অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাঁর পিতা প্রয়াত হওয়ার পর, ফয়সাল প্যাটেল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার আশা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর যাত্রা ছিল মসৃণ নয়। একাধিক বার তিনি দলের অগ্রগতিতে উপেক্ষিত ও প্রত্যাখ্যাত অনুভব করেছেন, যা তাকে তাঁর সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে।

কংগ্রেসের প্রতি ফয়সালের বার্তা
কংগ্রেসের প্রতি তাঁর এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফয়সাল প্যাটেল একটি গভীর বার্তা দিয়েছেন, যা দলের ভবিষ্যতের জন্য একটি চিন্তার বিষয়। তিনি বলেন, কংগ্রেস তাঁর পরিবার থাকবে, তবে এটি বোঝানো হয়েছে যে তিনি এখন তাঁর পিতার সঙ্কল্পের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও, তিনি এখন সেই দলের অংশ হতে চান না যেখানে তাঁর অবদান সঠিকভাবে মূল্যায়ন হয়নি।

ফয়সাল প্যাটেলের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতে পারে। কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরিবার থেকে এমন একটি ঘোষণা, দলের ভেতরের ক্ষুদ্রতর রাজনৈতিক বিষয়গুলির দিকে ইঙ্গিত করছে। দলের কর্মীরা এবং নেতারা যে আগের মতোই ফয়সালকে সমর্থন দিয়েছেন, তা সত্ত্বেও দলের অভ্যন্তরে তাঁর অবস্থান স্থির হয়নি।

কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ ও ফয়সালের ভূমিকা
ফয়সাল প্যাটেলের এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের জন্য একটি বড় সংকেত। তিনি এখন দলের বাইরে নিজের ভবিষ্যৎ রচনা করার পরিকল্পনা করবেন। তবে, ফয়সালের রাজনৈতিক যাত্রা কোথায় যাবে, তা এখনো অনিশ্চিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এই পদক্ষেপ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরও কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, ফয়সালের মানবিক কর্মকাণ্ডে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত যদি তিনি নেন, তা হলে এটি তাঁকে দলের বাইরে থেকেও জনগণের মাঝে একটি নতুন পরিচিতি এনে দিতে পারে।

ফয়সাল প্যাটেলের এই ঘোষণাটি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা নয়, এটি ভারতীয় রাজনীতির জন্য একটি বড় বার্তা। তাঁর পিতার পথ অনুসরণ করা, অথচ তাঁর জন্য কাঙ্ক্ষিত সম্মান ও মর্যাদা পাওয়া না যাওয়া, যে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক হতে পারে। তবে, এখন ফয়সাল প্যাটেল যে কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ না হলেও, তাঁর ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখতে হবে। মানবতার জন্য কাজ করতে চাওয়ার মনোভাব তার জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে, যা কংগ্রেসের দলীয় রাজনীতির বাইরেও তার প্রভাব ফেলতে পারে।