‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই’ কে লক্ষ্য করে বিস্ফোরক খড়গে

Explosive Kharge’s Statement Targeting the Fight for Freedom Against Communalism কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) সম্প্রতি এআইসিসি (অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি) অধিবেশনে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক…

kharge protest against BJP

Explosive Kharge’s Statement Targeting the Fight for Freedom Against Communalism

   

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে (kharge) সম্প্রতি এআইসিসি (অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটি) অধিবেশনে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই করছি। পার্থক্য শুধু এটাই যে, আগে বিদেশিরা সাম্প্রদায়িকতার মাধ্যমে লাভবান হতো, আর এখন এই সরকার তা করছে।” খড়গের এই বক্তব্য বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তাঁর দলের অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে।

এআইসিসি অধিবেশনে খড়গে (kharge) অভিযোগ করেছেন

এআইসিসি অধিবেশনে খড়গে (kharge) আরও অভিযোগ করেছেন যে, দেশে একচেটিয়া ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের সম্পদ সরকারের ধনী বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “দেশের সম্পদ ক্রমশ কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের হাত থেকে তাদের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে এই সরকার তাদের ধনী বন্ধুদের উপহার দিচ্ছে।” তাঁর এই মন্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক নীতি, বিশেষ করে বেসরকারিকরণ ও বড় শিল্পপতিদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের প্রতি ইঙ্গিত করে।

বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও খড়গে সরব হয়েছেন

মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতি সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচন নিয়েও খড়গে (kharge) সরব হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, “মহারাষ্ট্র নির্বাচনে বিরোধীদলকে পরাজিত করার জন্য ‘প্রতারণা’ করা হয়েছে।” তিনি এই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘অন্যায্য’ বলে অভিহিত করে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। খড়গের মতে, বিরোধীদের দমন করতে সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করছে, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়েও খড়গে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “গোটা বিশ্ব এখন ইভিএম থেকে ব্যালট পেপারে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা এখনও ইভিএম ব্যবহার করছি। এটা পুরোপুরি প্রতারণা।”

তাঁর এই মন্তব্য ইভিএম-এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। খড়গে দাবি করেছেন, ইভিএম-এর মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফলের সঙ্গে ছলচাতুরি করা সম্ভব, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি ব্যালট পেপারে ফিরে যাওয়ার পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির তীব্র সমালোচনা

এছাড়াও, খড়গে কেন্দ্রীয় সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “যে ভাবে পাবলিক সেক্টর ইউনিটগুলো (পিএসইউ) মোদিজির বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন মোদিজি পুরো দেশটাকেই ‘বিক্রি’ করে দেবেন।”

Advertisements

তাঁর এই মন্তব্যে সরকারের উপর তীব্র কটাক্ষ এবং জনগণের মধ্যে আশঙ্কা জাগানোর চেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। খড়গে উল্লেখ করেছেন, রেল, বিমান পরিষেবা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থাগুলো একের পর এক বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।

রেপো রেট কমলেও সেনসেক্স ও নিফটি নিম্নমুখী

কংগ্রেস দলের ভবিষ্যৎ কৌশলের ইঙ্গিত

এআইসিসি অধিবেশনে খড়গের এই বক্তৃতা কংগ্রেস দলের ভবিষ্যৎ কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের এই লড়াই শুধু ক্ষমতার জন্য নয়, দেশের গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার বাঁচানোর জন্য।” তিনি সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া

খড়গের এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি এই অভিযোগগুলোকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপির একজন মুখপাত্র বলেন, “খড়গে ও কংগ্রেস বারবার মিথ্যা অভিযোগ তুলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। ইভিএম নিয়ে তাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক।” তিনি আরও দাবি করেন, সরকারের বেসরকারিকরণ নীতি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য, এবং এতে কোনো অন্যায় নেই।

অন্যদিকে, কংগ্রেস সমর্থকরা খড়গের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এই বক্তৃতা বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে সহায়ক হবে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে ইভিএম বনাম ব্যালট পেপারের প্রশ্নে নিজেদের মত প্রকাশ করছেন।

ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মোড়

খড়গের এই বক্তব্য ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মোড় আনতে পারে। মহারাষ্ট্র নির্বাচনের পর বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, এবং তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। খড়গের ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এর উল্লেখ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে জনগণের মধ্যে আলোড়ন ফেলেছে। এই অধিবেশনের পর কংগ্রেসের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। খড়গের নেতৃত্বে দলটি কি সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে।