জয়পুর: দেশের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) রাজস্থান বিধানসভার কাছে তাঁর প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে প্রাপ্য পেনশন পুনরায় চালু করার জন্য আবেদন করেছেন। গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যজনিত কারণে তিনি উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। এরপরই তিনি রাজস্থান বিধানসভায় আনুষ্ঠানিকভাবে পেনশন পুনর্বহালের জন্য চিঠি দেন। বিধানসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনটি এক মাসেরও বেশি আগে জমা পড়েছে এবং বর্তমানে তা প্রক্রিয়াধীন।
জগদীপ ধনখড় ঝুনঝুনু জেলার কিথানা গ্রামের বাসিন্দা। রাজনীতির ময়দানে তাঁর যাত্রা শুরু জনতা দল থেকে। ১৯৮৯ সালে তিনি ঝুনঝুনু থেকে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন এবং চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ১৯৯১ সালে পুনরায় লোকসভা নির্বাচন লড়লেও জয়ী হতে পারেননি। ১৯৯৩ সালের রাজস্থান বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে কিশনগড় আসন থেকে বিধায়ক হন এবং ১৯৯৮ পর্যন্ত এক মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই সময় রাজস্থানের প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে তাঁর পেনশন বন্ধ করা হয়। পরে ২০২২ সালের আগস্টে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পরও তা পুনরায় চালু হয়নি। এবার ইস্তফার পর তিনি পুনরায় পেনশনের আবেদন করেছেন। বিধানসভা সূত্রে জানা গেছে, বিধানসভা স্পিকার বাসুদেব দেবনানি আবেদনটি বিধানসভার সচিবের কাছে পাঠিয়েছেন এবং তা দ্রুত অনুমোদনের পথে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, রাজস্থানে এক মেয়াদে বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীর মাসিক পেনশন ৩৫ হাজার টাকা। তবে ৭০ বছরের বেশি বয়সী প্রাক্তন বিধায়কদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়। ফলে ৭৪ বছর বয়সি ধনখড় মাসিক ৪২ হাজার টাকা পেনশন পাওয়ার যোগ্য।
ধনখড় রাজস্থানের জাট সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত। রাজ্যের ভোটারদের প্রায় ১২ থেকে ১৬ শতাংশ এই সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় তাঁদের সমর্থন নির্বাচন জয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উপরাষ্ট্রপতির আকস্মিক পদত্যাগ রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষত জাট ভোটব্যাঙ্কে।
জাট সম্প্রদায়ের নেতা রাজা রাম মিল এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ধনখড়ের এই পদত্যাগে সমাজে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। তিনি প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতিকে প্রকাশ্যে বিষয়টি স্পষ্ট করার আহ্বান জানান।
কিন্তু ধনখড় এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি। বিজেপির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যজনিত কারণেই পদত্যাগ করেছেন তিনি। অন্যদিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র প্রতাপ সিং খাচারিয়াবাস ধনখড়কে সরাসরি আক্রমণ করে বলেছেন, “তিনি যদি নিজের কথা স্পষ্টভাবে বলতে না পারেন, তবে কংগ্রেসের পক্ষে তাঁর হয়ে কথা বলা বোকামি হবে।”
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে যে, উচ্চ আদালতের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাড়ি থেকে নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনার পর বিরোধী দলগুলির আনা অভিশংসন প্রস্তাব তিনি রাজ্যসভায় গ্রহণ করেছিলেন। কেন্দ্র তখন একই প্রস্তাব লোকসভায় আনতে চেয়েছিল। সূত্রের খবর, এর পরেই ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে আলোড়ন শুরু হয়।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও সম্প্রতি ধনখড়ের পদত্যাগ প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বলেন, “ওনার পদত্যাগের পিছনে একটা বড় গল্প আছে।”
প্রাক্তন উপররাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্ত এবং পেনশন পুনরায় শুরু করার আবেদন এখন রাজস্থানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।