অবসরের পূর্বে সুপ্রিম কোর্টে আবেগপূর্ণ বার্তা প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের

দেশের প্রধান বিচারপতির আসনে দীর্ঘ ৮ বছরের কর্মজীবন শুক্রবার শেষ করলেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এরপর…

Emotional Message from Chief Justice Chandrachud Before Retirement in Supreme Court

দেশের প্রধান বিচারপতির আসনে দীর্ঘ ৮ বছরের কর্মজীবন শুক্রবার শেষ করলেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০২২ সালে ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন। সেই হিসেব মতো দেখতে গেলে তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী রবিবার।

কিন্তু শনি ও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবারই শেষ বারের জন্য এজলাসে বসলেন প্রধান বিচারপতি। গত আট বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে বসে তিনি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা শুনেছেন, যার মধ্যে ছিল বহু সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়। তিনি তার কর্মজীবন জুড়ে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।

   

শুক্রবার চন্দ্রচূড়ের অবসর উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ বিদায়ী অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। আজকের সেই অনুষ্ঠানে আইনজীবী, বিচারপতি, এবং সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিনেও সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি শেষবারের মতো এজলাসে বসে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেছেন, “আগামীকাল (শনিবার) থেকে আর ন্যায়বিচার দিতে পারব না, কিন্তু আমি সন্তুষ্ট।” অর্থাৎ দীর্ঘ ৮ বছরের বিচারকাজের পর অবসরের সময় তার মনে এক ধরনের শান্তি এবং পরিতৃপ্তি রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতি সবার কাছে তার দীর্ঘ কর্মজীবনের কথা স্মরণ করে বলেছেন, “আমি যদি কোনো সময় আদালতে কাউকে আঘাত করে থাকি, তাহলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন।”

বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তার নেতৃত্বে বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রম অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও কার্যকরী ছিল। অনেকেই তার এজলাসে উপস্থিত থাকতে পারেননি তবে সবাই তার অবদানকে অত্যন্ত মূল্যবান বলে উল্লেখ করেছেন। প্রধান বিচারপতির বিদায়ী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার উত্তরসূরি বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, যিনি আগামী দিনগুলোতে দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেবেন।

চন্দ্রচূড় বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার উপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “তিনি একজন যোগ্য নেতা এবং তার হাতে বিচারব্যবস্থা সুরক্ষিত থাকবে।” প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের পর বিচারপতি সঞ্জীব খান্না দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বিচারপতি খান্না অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন বিচারক, যিনি সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে সুনাম অর্জন করেছেন।

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারব্যবস্থা যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তার অবসরের পর বিচারপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কীভাবে এগিয়ে যাবে তা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বিচারবিভাগের স্বাধীনতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি দেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদে পৌঁছানোর আগে দীর্ঘদিন বিচারক হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি করেছেন।

চন্দ্রচূড়ের মতে, বিচারব্যবস্থার প্রতিটি অংশের কার্যক্রমের সাথে অত্যন্ত সতর্কতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করা প্রয়োজন। তার স্বীকৃতির মধ্যে ছিল তার উদার মানসিকতা এবং আইন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। তিনি সবসময় বিচারপ্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে কথা বলেছেন এবং দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন।

ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দেশের বিচার ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী অংশ ছিলেন। তার অবদান বিচারবিভাগের স্বাধীনতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যদিও তার কর্মজীবন শেষ হচ্ছে, তার কর্মের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতেও বিচারকদের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।