বিরোধীদের চাপ! ভোটার তালিকা সংশোধনে নয়া নিয়ম নির্বাচন কমিশনের

নয়াদিল্লি, ২৪ সেপ্টেম্বর: ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছে, যা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াকে (Voter List Reform) আরও নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করে…

CPM claims Election Commission ignores fake and dead voters in West Bengal booths ahead of 2026 elections

নয়াদিল্লি, ২৪ সেপ্টেম্বর: ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছে, যা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াকে (Voter List Reform) আরও নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করে তুলবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকা থেকে কোনো নাম মুছতে গেলে এখন থেকে আধার কার্ডের সাথে লিঙ্ক করা মোবাইল নম্বর এবং ওটিপি-ভিত্তিক ই-স্বাক্ষর যাচাইকরণ বাধ্যতামূলক হবে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ভোটার তালিকার সঙ্গে জালিয়াতি এবং ভুলভাবে নাম মুছে ফেলার ঝুঁকি কমানো। এই সিদ্ধান্তটি বিশেষ করে তখন আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে, যখন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কার্নাটকের আলন্দ কেন্দ্রে গত ২০২৩ সালের নির্বাচনে ভোটার তালিকা থেকে ব্যাপক নাম মুছে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন।

রাহুল গান্ধীর অভিযোগ ছিল, আলন্দ কেন্দ্রে প্রায় ৬,০০০ ভোটারের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল, যেখানে জাল সিম কার্ড ব্যবহার করে আইডেন্টিটি দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের উপর তীব্র প্রশ্ন তুলেছেন এবং কার্নাটক সিআইডি-এর কাছে প্রমাণ হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। তবে, নির্বাচন কমিশন প্রথমে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উপেক্ষা করেছিল। পরে যাচাই করা হলে দেখা গেছে, ৬,০১৮টি আবেদনের মধ্যে মাত্র ২৪টিই সঠিক ছিল, বাকি ৫,৯৯৪টি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন এই নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে, যা ২০২১ সালের প্রতিনিধি গণ নির্বাচন আইনের সংশোধনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

   

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার জন্য আবেদন করতে গেলে আধার কার্ডের সাথে যুক্ত মোবাইল নম্বরে ওটিপি পাঠানো হবে, এবং তা দিয়ে ই-স্বাক্ষরের মাধ্যমে যাচাইকরণ সম্পন্ন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপ এবং ইসিআইনেট পোর্টালের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। এই ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য হলো ভোটার তালিকার অখণ্ডতা রক্ষা করা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর জনগণের ভরসা বজায় রাখা। তবে, এই সিদ্ধান্তের সময়সূচী নিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, কারণ এটি রাহুল গান্ধীর অভিযোগের কয়েক দিন পরই জারি করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই নতুন ব্যবস্থার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় যেখানে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা প্রায়শই উঠে আসে। রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখনও এই নতুন নিয়মের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা শুরু করেনি, তবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টি উভয়ই এই বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পিছপা হচ্ছেন না। তৃণমূল নেতারা বলছেন, এই ব্যবস্থা গ্রামীণ এলাকায় জনগণের জন্য জটিল হতে পারে, যেখানে আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক করা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা এই পদক্ষেপকে ভোটার তালিকা পরিষ্কার করার জন্য একটি স্বাগতম সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করছেন।

Advertisements

সামাজিক গবেষণা কেন্দ্র (সিএসডিএস) এর ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, নির্বাচন কমিশনের উপর জনগণের ভরসা ৭০ শতাংশের বেশি ছিল। তবে, সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার পর এই ভরসা কতটা টেকসই থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদিও বড়ো আকারের ভোটার জালিয়াতির নিয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য গবেষণা এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবুও এই নতুন ব্যবস্থা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আগামী বছর বিহারে আসন্ন নির্বাচনের আগে এই পরিবর্তনের প্রভাব কী হবে, তা দেখার জন্য রাজনৈতিক বৃত্তে উৎসাহ দেখা দিয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News