বন্দর দিয়ে বেআইনি লোহা পাচার! প্রযুক্তি শহরে তদন্তে ইডি

ed-belekeri-illegal-iron-ore-export-case

বেঙ্গালুরু: আবারও চাঞ্চল্য তৈরি করল বেআইনি লোহার আকরিক রফতানির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি (Enforcement Directorate)। বৃহস্পতিবার সকালে একযোগে বেঙ্গালুরু, হসপেট ও গুরগাঁও-সহ প্রায় ২০টি জায়গায় চলছে ইডির জোরদার তল্লাশি অভিযান। জানা গিয়েছে, বেলেকেরি বন্দরের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ লোহার আকরিক রফতানির সঙ্গে যুক্ত সংস্থা ও ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতেই এই অভিযান শুরু করেছে সংস্থা।

Advertisements

জগন্নাথ অতীত! এবার দার্জিলিঙে মমতার হাত ধরে আসছেন দ্বিতীয় মহাকাল

ইডি সূত্রে খবর, এই তদন্ত শুরু হয়েছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন (PMLA), ২০০২-এর আওতায়। মামলার ভিত্তি হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই (CBI) কর্তৃক দায়ের করা একাধিক এফআইআর এবং চার্জশিট, যা দেশের শীর্ষ আদালত অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দায়ের করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট ২০১১ সালে বেলেকেরি বন্দরে বেআইনি খনিজ রফতানির ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেয়, সেই সূত্রেই বহু বছরের পুরনো এই মামলাটি আবারও সামনে এসেছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী বেলেকেরি বন্দর থেকে হাজার হাজার টন লোহার আকরিক বেআইনিভাবে বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি কোষাগারে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, কর ফাঁকি, পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন এবং কালো টাকার জোগানচক্র সব মিলিয়ে গোটা ঘটনাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক বিশাল আর্থিক দুর্নীতির চিত্র।

সূত্রের খবর, ইডি যেসব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ব্যবসায়িক সংস্থা, খনি সংক্রান্ত কনসালটেন্সি অফিস, এবং কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বাসভবন। এই তল্লাশি অভিযান চলবে সারাদিন ধরে, এবং প্রয়োজনে পরবর্তী দিনেও জারি থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ইডির শীর্ষকর্তারা।

Advertisements

উল্লেখ্য, বেলেকেরি বন্দরের মাধ্যমে বেআইনি রফতানির অভিযোগ প্রথম উঠে আসে কর্নাটকের তৎকালীন খনি কেলেঙ্কারির সময়। একসময় রাজ্যের রাজনীতিতেও এই ইস্যু বড় প্রভাব ফেলেছিল। সেই সময়ই বহু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতির নাম জড়িয়ে পড়েছিল এই রফতানি চক্রের সঙ্গে। তদন্তে উঠে এসেছে, মিথ্যা নথি ও জাল এক্সপোর্ট লাইসেন্স ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ লোহার আকরিক বিদেশে পাঠানো হয়েছিল, যার বাজারমূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা।

তদন্তকারীদের অনুমান, এই বেআইনি ব্যবসা চালানোর মাধ্যমে কিছু সংস্থা বিদেশি অ্যাকাউন্টে বিপুল অর্থ পাচার করেছে। বর্তমানে ইডির তদন্তের মূল ফোকাস সেই আর্থিক লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজখবর নেওয়া। এছাড়াও যেসব সংস্থা রফতানি প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল, তাদের নথিপত্র ও ই-মেইল রেকর্ডও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইডির এক সিনিয়র অফিসার জানিয়েছেন, “আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার—কে কোথা থেকে কত টাকা অর্জন করেছে, কীভাবে সরকারি নীতিকে এড়িয়ে এই রফতানি হয়েছে, এবং এর সঙ্গে বিদেশি সংস্থার যোগসূত্র কোথায়। সমস্ত তথ্য যাচাই করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এদিকে, এই ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠছে দেশের খনিজ রফতানি খাতে নজরদারির দুর্বলতা নিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও নীতির অভাবে বহু বছর ধরেই কর্নাটক, গোয়া এবং ওড়িশা থেকে বেআইনি লোহার আকরিক রফতানি হয়ে আসছে। এবার সেই দুর্নীতির জাল আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে নামল ইডি।