মেক ইন ইন্ডিয়ায় ইতিহাস গড়ে আবিষ্কার তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রতিষেধক

drdo-inmas-prussian-blue-capsule-cs137-antidote

ভারতীয় বিজ্ঞান আবারও বিশ্বমঞ্চে গর্বের কারণ হয়ে উঠল। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হল প্রাণরক্ষাকারী এক অত্যাধুনিক ওষুধ ‘প্রুশিয়ান ব্লু ক্যাপসুল (Pru-Decorp)’, যা রেডিওঅ্যাকটিভ সিজিয়াম-১৩৭ (Cs-137) দূষণের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে।

Advertisements

এই গুরুত্বপূর্ণ ওষুধটি তৈরি করেছে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (DRDO) অধীনে থাকা ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস (INMAS), ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের সহযোগিতায়। প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (TDF)।

বিশ্বকাপে জোড়া হারের পর আইসিসির কোপে ভারত, আর খেলতে পারবে ম্যাচ?

রেডিওঅ্যাকটিভ সিজিয়াম-১৩৭ একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পদার্থ, যা পারমাণবিক দুর্ঘটনা বা বিকিরণ দূষণের ঘটনায় মানবদেহে প্রবেশ করলে গুরুতর ক্ষতি ঘটাতে পারে। এটি রক্ত, পেশী এবং হাড়ে জমা হয়ে দীর্ঘমেয়াদি রেডিয়েশনজনিত সমস্যা তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে ‘প্রুশিয়ান ব্লু’ ক্যাপসুল কাজ করে এক কার্যকরী অ্যান্টিডোট (antidote) হিসেবে—দেহ থেকে Cs-137 কে বাঁধন দিয়ে বের করে দেয়, ফলে বিকিরণজনিত ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হয়।

INMAS-এর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পে গবেষণা চালিয়ে আসছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল একটি সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে উন্নত, নিরাপদ ও কার্যকর প্রতিষেধক তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সহজলভ্য হবে।

সেই প্রচেষ্টাই আজ সফল হয়েছে।INMAS-এর একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী বলেন, “এই প্রুশিয়ান ব্লু ক্যাপসুল শুধু সামরিক নয়, বেসামরিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গবেষণাগার বা দুর্ঘটনাজনিত রেডিয়েশন ছড়িয়ে পড়লে এটি জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা পালন করবে।”

Advertisements

এই প্রকল্পে ভারতের বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। TDF-এর মাধ্যমে তহবিল এবং শিল্প সহযোগিতা মিলে DRDO-র গবেষণাকে বাস্তব প্রয়োগে রূপ দিয়েছে। এটি “সরকার-বিজ্ঞান-শিল্প” সহযোগিতার এক সফল উদাহরণ।

প্রুশিয়ান ব্লু ক্যাপসুল ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদার্থ, যা ইউএস এফডিএ (FDA) অনুমোদিত। তবে এতদিন ভারত সম্পূর্ণভাবে আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন দেশীয়ভাবে তৈরি এই ওষুধ সেই নির্ভরতা দূর করবে এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে।

INMAS-এর ডিরেক্টর জানান, “এই ওষুধের দেশীয় উন্নয়ন আমাদের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এটি শুধু দেশের সুরক্ষা বাহিনী নয়, সাধারণ নাগরিকদের জন্যও সহজলভ্য করা হবে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক বিকিরণ বা রেডিওঅ্যাকটিভ দূষণ প্রতিরোধে এমন প্রযুক্তি ভারতকে বৈজ্ঞানিক নিরাপত্তায় নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বে খুব কম দেশই নিজেদের প্রযুক্তিতে এমন প্রতিষেধক তৈরি করতে পেরেছে।

এই উদ্ভাবনের ফলে এখন ভারত শুধুমাত্র আত্মনির্ভর নয়, বরং আন্তর্জাতিক জরুরি পরিস্থিতিতেও রপ্তানিযোগ্য মেডিকেল প্রতিষেধক তৈরির ক্ষমতা অর্জন করল। এটি নিঃসন্দেহে ভারতের বৈজ্ঞানিক, প্রতিরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ইতিহাসে এক মাইলফলক।