নয়াদিল্লি: রেড ফোর্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তদন্তের যে বহুমুখী তৎপরতা শুরু হয়েছিল, তারই অংশ হিসাবে শুক্রবার ভোররাতে পুলওয়ামায় ডা. উমর-উন-নবীর বাড়িতে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ চালাল নিরাপত্তাবাহিনী। রাতভর প্রস্তুতির পর ভোরের অন্ধকারে সেই বাড়িটি আইইডি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের দাবি, বাড়ির ভেতর এমন কিছু উপাদান পাওয়া গিয়েছিল যা নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করতে এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছিল।
রেড ফোর্ট বিস্ফোরণে ব্যবহৃত Hyundai i20 গাড়ির সঙ্গে সরাসরি যোগ পাওয়া গিয়েছে ডা. উমরের। বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাংশের ডিএনএ তাঁর মায়ের নমুনার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে।
কে এই ডা. উমর নবী?
স্থানীয়দের কাছে তিনি ছিলেন মেধাবী, সংযত স্বভাবের এক তরুণ চিকিৎসক। কিন্তু গত দুই বছরে তাঁর আচরণে চরম পরিবর্তন নজরে আসে। তদন্তে ইঙ্গিত, তিনি ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হন কঠোরপন্থী মতাদর্শে, যোগ দেন একাধিক র্যাডিক্যাল চ্যাটগ্রুপে। সুইৎজ়ারল্যান্ড-ভিত্তিক এনক্রিপ্টেড অ্যাপ Threema–তেই তিনি এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক— ডা. মুজাম্মিল আহমদ গণাই ও ডা. শাহিন শাহীদ—অপারেশনের বিস্তৃত পরিকল্পনা সাজাতেন। পাশাপাশি, উমর নিজের উদ্যোগে একটি ছোট Signal গ্রুপ তৈরি করেন, যেখানে মাত্র হাতেগোনা সদস্য যুক্ত ছিল, এবং অপারেশনের সংবেদনশীল অংশগুলি সেখানেই সমন্বয় করা হতো।
পরিকল্পনার জন্য তহবিল সংগ্রহ
গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে বড় তথ্য। সন্দেহভাজনরা মিলে ২৬ লক্ষ টাকারও বেশি তহবিল সংগ্রহ করেছিল— যার বড় অংশ ছিল নগদ। সেই অর্থের সিংহভাগই তুলে দেওয়া হয় উমরের হাতে। তদন্ত বলছে, এই টাকা খরচ করা হয় প্রায় ২৬ কুইন্টাল NPK ফার্টিলাইজার কেনার জন্য। গুরগাঁও, নুহ এবং আশপাশের সরবরাহকারীদের থেকে কেনা সেই সারের বাজারদর ছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। NPK সার, অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে মেশালে শক্তিশালী আইইডি তৈরি করা যায়— যা এই জঙ্গি নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য হিসেবেই লক্ষ করা যাচ্ছে।
ফারিদাবাদে উদ্ধার হওয়া ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরকের সঙ্গে এই চক্রের যোগাযোগ থাকতেই পারে বলে মনে করছে তদন্তকারী দল।
চার শহরে সমন্বিত হামলার ছক
পিটিআই সূত্রে পাওয়া তথ্য আরও উদ্বেগজনক। তদন্তকারীদের সন্দেহ, কমপক্ষে আটজন সদস্য এই নেটওয়ার্কে সক্রিয় ছিল। পরিকল্পনা ছিল আটজনকে জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করে চারটি শহরে একযোগে বিস্ফোরণ ঘটানোর। রেড ফোর্ট বিস্ফোরণ সেই বৃহত্তর নীলনকশার প্রথম ধাপ ছিল কি না, তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রাতভর তল্লাশি, সাত জন গ্রেফতার— তদন্ত আরও বিস্তৃত হচ্ছে
বিস্ফোরণের পর রাতভর অভিযানে ডা. উমরের পরিবার-সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসছে নতুন তথ্য। তদন্তকারী সংস্থার মতে, লালকেল্লার বিস্ফোরণ ও ফারিদাবাদ মডিউল— দুই ক্ষেত্রের যোগসূত্র পরিষ্কার। এনক্রিপ্টেড অ্যাপে কথোপকথন, অর্থের প্রবাহ, বিস্ফোরক সংগ্রহ এবং শহরভিত্তিক টার্গেট— সব মিলিয়ে ইঙ্গিত, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ‘লোন উল্ফ’ ঘটনা নয়; বরং সুপরিকল্পিত জঙ্গি অপারেশন।
তদন্তের পরবর্তী দিক: বিদেশি সংযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে
তদন্তকারীদের মতে, গোটা অপারেশনের পিছনে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক জড়িত থাকতে পারে। অর্থচক্র, এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ এবং বিভিন্ন শহরে সমন্বিত হামলার ছক, সবই নির্দেশ করছে যে তদন্ত আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রেড ফোর্ট বিস্ফোরণের পর দেশজুড়ে সতর্কতা ইতিমধ্যেই জারি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, পরবর্তী কয়েক দিনই তদন্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।


