বিহার: বিধানসভা নির্বাচনের (Bihar Elections) দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে রাজনৈতিক প্রচার যে ভাবে চড়ছে, শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সীতামড়ির সভা তার স্পষ্ট প্রমাণ। মা সীতার জন্মভূমি সীতামড়ির মাঠ থেকে তিনি সরাসরি মহাগঠবন্ধন, বিশেষ করে আরজেডি শাসনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, বিহার আর কট্টা সরকার চায় না, বিহার আবার এনডিএ সরকার চায়।
প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা শুরু করেন আবেগমেশানো সুরে। তিনি বলেন, “আজ মা সীতার পবিত্র ভূমিতে আপনাদের আশীর্বাদ নিতে এসেছি। মা সীতার আশীর্বাদেই বিহার উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সম্ভাবনাময় রাজ্যে পরিণত হবে।” এরপরেই তিনি প্রসঙ্গ তোলেন বিহারের ভবিষ্যৎ এবং শিশুদের আগামীর সম্ভাবনা। তাঁর বক্তব্য, এবারের নির্বাচন শুধু সরকার গঠনের লড়াই নয়, এটি বিহারের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন রচনার নির্বাচন।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “বিহারের সন্তান কি অপরাধী হবে, নাকি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিচারক হবে?” সঙ্গে যোগ করেন, “আমাদের লক্ষ্য বিহারের সন্তান রংদার নয়, দেশের গর্ব হয়ে উঠুক। আরজেডির আমলে যুবকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেই অন্ধকার দূর করেছি, সুযোগ তৈরি করেছি।”
মোদী “জঙ্গলরাজ” শব্দবন্ধকে তুলে ধরে বলেন, “জঙ্গলরাজ মানে বন্দুক, হিংসা, অপরাধ, তিক্ততা, দুর্নীতি আর বেকারত্ব। জঙ্গলরাজ মানে এমন শাসন যেখানে পরিবারের দূর্দশা বাড়ে, স্বপ্ন ভেঙে যায়, শিল্প বন্ধ হয়ে যায়, আর যুবকদের হাতে কাজ না থেকে বন্দুক তুলে দেওয়া হয়।” তিনি আরও দাবি করেন, “যারা ১৫ বছর শাসন করেছে, তারা বিহারকে পিছিয়ে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে তারা শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”
শিল্প ও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরজেডি আর কংগ্রেস শিল্পের A, B, C, D কিছুই জানে না। তারা শুধু কারখানার গেটে তালা লাগাতে জানে। ১৫ বছরে বিহারে একটি বড় শিল্প আসেনি, এমনকি মিথিলার পুরনো মিল-কারখানাও বন্ধ হয়ে গেছে।” তাঁর অভিযোগ, মহাগঠবন্ধন সরকার বিহারে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করেছে, যার ফলে রাজ্যের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়েও মোদী তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “১৫ বছরের জঙ্গলরাজে বিহার একটি বড় হাসপাতালও পায়নি, একটি মেডিক্যাল কলেজও তৈরি হয়নি। মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবাও অবহেলিত ছিল। তাই জঙ্গলরাজের উন্নয়নের দাবি শুধু সাদা মিথ্যা।”
এরপরেই প্রধানমন্ত্রী এনডিএ সরকারের আমলে বিহারে হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আজ বিহারে বিনিয়োগ আসছে, নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে, রেল ও বিমান যোগাযোগ বাড়ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে উঠছে, রিগা সুগার মিল নতুন করে চালু হয়েছে। আগামীতেও আরও কারখানা, আরও শিল্প, আরও কর্মসংস্থান আসবে।”
সীতামড়িবাসীর জন্য বড় ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শীঘ্রই সীতামড়ি থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত সরাসরি রেল পরিষেবা চালু হবে, যা এই এলাকাকে রামায়ণ সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত করবে। তিনি বলেন, “আমরা শুধু উন্নয়ন করছি না, আমরা বিহারের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আস্থাকেও সম্মান দিচ্ছি।”
প্রথম দফা ভোটের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রথম দফাতেই জঙ্গলরাজের লোকেরা ৬৫ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে গেছে। বিহারের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন তারা কাকে চান।” মোদী তাঁর বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে ফের স্লোগান তোলেন, “নেহি চাহিয়ে কট্টা সরকার, ফির এক বার এনডিএ সরকার।” মাঠে উপস্থিত জনসমুদ্র সেই স্লোগানের জবাব দেন প্রবল উৎসাহে।
