প্রতিরক্ষা সূত্রে বন্ধ রাখতে হবে বিমানের পর্দা, কি নির্দেশ দিল ডিজিসিএ ?

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (dgca), সমস্ত বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রতিরক্ষা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন এবং অবতরণের…

dgca new advisory for companies

ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (dgca), সমস্ত বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রতিরক্ষা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় বিমানের জানালার পর্দা বন্ধ রাখতে হবে, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান পশ্চিম সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত বিমানঘাঁটিগুলোতে।

এই নির্দেশনা ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষিতে জারি করা হয়েছে, যা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার জন্য পরিচালিত হয়েছিল।

   

ডিজিসিএ-র নির্দেশ অনুযায়ী (dgca)

ডিজিসিএ-র (dgca) নির্দেশ অনুযায়ী, বিমান ১০,০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর আগে উড্ডয়নের সময় এবং অবতরণের সময় ১০,০০০ ফুটের নিচে নামার পর থেকে পার্কিং বে-তে পৌঁছানো পর্যন্ত জানালার পর্দা বন্ধ রাখতে হবে। এই নিয়ম থেকে শুধুমাত্র জরুরি প্রস্থান সারির (ইমার্জেন্সি এক্সিট রো) যাত্রীরা ছাড় পাবেন, কারণ নিরাপত্তার জন্য তাদের জানালা খোলা রাখা প্রয়োজন। এই নির্দেশনা বেসামরিক এবং সামরিক উভয় কাজে ব্যবহৃত দ্বৈত-ব্যবহারের বিমানবন্দরগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

“অপারেশনাল নিরাপত্তা” বৃদ্ধি

এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো “অপারেশনাল নিরাপত্তা” বৃদ্ধি করা এবং “সাধারণ মানুষের দ্বারা অসাবধানতাবশত সুরক্ষা-সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ” রোধ করা। ডিজিসিএ (dgca)আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, সামরিক বিমানঘাঁটিগুলোতে ছবি তোলা বা ভিডিও ধারণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

এই নিয়ম ভঙ্গ করলে বেসামরিক বিমান চলাচল আইন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিমান সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, তারা যাত্রীদের এই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানাবে এবং নিয়ম ভঙ্গের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।

বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে

এই নির্দেশনা (dgca)কঠোরভাবে পালন করতে হবে এমন বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে রয়েছে লেহ, শ্রীনগর, জম্মু, পাঠানকোট, আদমপুর, চণ্ডীগড়, বাথিন্ডা, জয়সালমির, নাল, যোধপুর, হিন্ডন, আগ্রা, কানপুর, বেরেলি, মহারাজপুর, গোরখপুর, ভুজ, লোহেগাঁও, গোয়া (ডাবোলিম) এবং বিশাখাপত্তনম। এই বিমানবন্দরগুলোর অধিকাংশই ভারতের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত, যেখানে সামরিক কার্যক্রম ঘনীভূত।

নির্দেশনার অংশ হিসেবে, বিমান সংস্থাগুলোকে উড্ডয়ন এবং অবতরণের আগে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করতে হবে, যাতে যাত্রীদের জানালার পর্দা বন্ধ রাখতে এবং ক্যামেরা বা ফোন ব্যবহার করে ছবি বা ভিডিও ধারণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

এছাড়াও, বিমান সংস্থাগুলোকে তাদের ক্রু সদস্যদের (dgca)জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রতিরক্ষা বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত ফ্লাইটগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ঝুঁকি কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়। বিমানবন্দরের বোর্ডিং গেট এবং বিমানের অভ্যন্তরে নোটিশ প্রদর্শন এবং ক্রু সদস্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই নিয়মগুলোর প্রতি যাত্রীদের সম্মতি নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisements

ইংল্যান্ড সফর হাতছাড়া হতেই প্রশ্ন উঠছে শামির টেস্ট ভবিষ্যৎ নিয়ে!

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা

এই নির্দেশনা জারির পেছনে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায়, যেখানে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়।

এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবর্ষণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যা ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। তবে, এই উত্তেজনার ফলে উত্তর, মধ্য এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দরে বেসামরিক উড্ডয়ন কয়েকদিনের জন্য বন্ধ ছিল। বর্তমানে এই বিমানবন্দরগুলোতে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়েছে, কিন্তু নিরাপত্তার উদ্বেগ এখনও রয়ে গেছে।

সাধারণত, উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময় জানালার পর্দা খোলা রাখার নির্দেশ থাকে, যাতে যাত্রীরা এবং ক্রু সদস্যরা বাইরের পরিস্থিতি, যেমন আগুন বা ধ্বংসাবশেষ, পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং জরুরি অবস্থায় প্রস্থান দ্রুত চিহ্নিত করতে পারে। তবে, প্রতিরক্ষা বিমানঘাঁটির ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। ডিজিসিএ (dgca)জানিয়েছে, জরুরি প্রস্থান সারির যাত্রীদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়, যাতে নিরাপত্তা প্রোটোকল বজায় থাকে।

এই নির্দেশনা জারির পেছনে আরেকটি উদ্বেগ

এই নির্দেশনা জারির পেছনে আরেকটি উদ্বেগ হলো সামাজিক মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, যাত্রীরা প্রায়ই উড্ডয়ন বা অবতরণের সময় জানালা দিয়ে ছবি বা ভিডিও তুলে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন, যা সামরিক ঘাঁটির বিন্যাস বা কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ করতে পারে। এই ধরনের তথ্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হাতে পড়লে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

এই প্রেক্ষিতে, গুজরাট অ্যান্টি-টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) সম্প্রতি কচ্ছ সীমান্ত থেকে সাহদেব সিং গোহিল নামে এক সন্দেহভাজন গুপ্তচরকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি পাকিস্তানি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন এবং বিএসএফ ও আইএএফ-এর সংবেদনশীল তথ্য পাঠাচ্ছিলেন। এই ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তার উদ্বেগকে আরও তীব্র করেছে।

ডিজিসিএ-র (dgca)এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি ভারতের সতর্কতা এবং সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। বিমান সংস্থাগুলোকে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করতে হবে, এবং যাত্রীদেরও সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। এই নিয়মগুলো ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।