Air Pollution Crisis: বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে সোমবার থেকে শারীরিক ক্লাস বন্ধ (NCR schools suspension) রাখার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশ অনুসারে, জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (এনসিআর)-এর সমস্ত রাজ্যকে দ্রুত অনলাইন ক্লাসে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে বায়ু মানের অবনতির কারণে ছাত্রদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়। এর ফলে দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে ১০ম এবং ১২তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে এবং সমস্ত ক্লাস অনলাইন পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে।
প্রথমে, দিল্লি সরকার কেবলমাত্র ১০ম এবং ১২তম শ্রেণির ছাত্রদের শারীরিক ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের একটি পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে, যার মধ্যে একটি প্রশ্ন উঠেছিল কেন ১০ম এবং ১২তম শ্রেণির ছাত্রদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, আদালত সমস্ত শ্রেণির জন্য শারীরিক ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে, দিল্লি সরকারের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আগামীকাল থেকে ১০ম এবং ১২তম শ্রেণির সকল শারীরিক ক্লাস স্থগিত থাকবে এবং সমস্ত পাঠ্যক্রম অনলাইনে চলে যাবে।” দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও ঘোষণা করেছে যে “ছাত্রদের বৃহত্তর স্বার্থে, শনিবার পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস পরিচালিত হবে।”
হরিয়ানার গুরগাঁওতে, জেলা প্রশাসকের অফিস ঘোষণা করেছে যে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত সমস্ত শ্রেণির ক্লাস অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। এই পদক্ষেপটি হরিয়ানার সরকার সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলিতে কার্যকর করেছে। গাজিয়াবাদে, উত্তরপ্রদেশের জেলা প্রশাসকও একই ধরনের ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন এবং ১২তম শ্রেণি পর্যন্ত সমস্ত ক্লাস অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। নয়ডাতেও শারীরিক ক্লাস ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
দিল্লির সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল কেন কেবল ১০ম এবং ১২তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শারীরিক ক্লাস চালু রাখা হচ্ছে, যখন অন্যান্য ছাত্রদের জন্য ইতিমধ্যে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আদালত এই প্রশ্নের উত্তর হিসেবে নির্দেশ দিয়েছে যে সমস্ত শ্রেণির জন্যই শারীরিক ক্লাস স্থগিত করতে হবে। আদালত দিল্লি সরকারের কাছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেছে, “যতদিন পর্যন্ত বায়ু মানের উন্নতি না হয়, ততদিন পর্যন্ত শারীরিক ক্লাস বন্ধ রাখতে হবে।”
এই অবস্থায়, বায়ু দূষণের সমস্যা যথেষ্ট মারাত্মক হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ু মানের সূচক (এএমআই) যখন ৪০০-এর বেশি হয়, তখন এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যার মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রয়েছে।
হরিয়ানার গুরগাঁও এবং উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, নয়ডা, এবং দিল্লির অন্যান্য অঞ্চলে এখন শারীরিক ক্লাস স্থগিত করা হলেও, পাঞ্জাব সরকার এখনও এই বিষয়ে কোনো ঘোষণা করেনি। তবে, পাঞ্জাবে ফসল কাটার পর পরবর্তী মাসগুলিতে পুড়ে যাওয়া ধানের খড়ের কারণে বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দূষণের কারণে দিল্লি এবং আশেপাশের অঞ্চলে বায়ু মানের অবনতি ঘটে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দূষণ শীতকালে আরও বাড়ে, কারণ শীতকালে বাতাসের গতিবেগ কমে যায় এবং দূষিত বায়ু স্থির হয়ে পড়ে। এর ফলে শ্বাসযন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণভাবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। তাই শাসকরা ইতিমধ্যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা অত্যন্ত জরুরি।
দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা এবং গাজিয়াবাদে ক্লাস অনলাইনে স্থানান্তরিত হওয়ার পর, অনেক ছাত্র এবং অভিভাবকরা এ সম্পর্কে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। অনেক ছাত্র মনে করছেন, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা অব্যাহত থাকবে, তবে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও যে কোনও ক্ষতি হবে না, তা নিশ্চিত করা উচিত। অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট, কারণ তারা তাদের সন্তানদের শারীরিক ক্লাসে না যাওয়ায় নিরাপদ মনে করছেন।
এছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে, সব রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যাতে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে এবং বায়ু দূষণ সমস্যার সমাধান করতে পারে।
পরিস্থিতি যাই হোক, বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি ও আশেপাশের অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা অনলাইন পদ্ধতিতে স্থানান্তরিত হওয়ায় আগামী সপ্তাহগুলিতে ছাত্রদের জন্য এক নতুন বাস্তবতা হতে চলেছে।