নয়াদিল্লি: দিল্লির রাতটা যেন রক্তে ভেজা স্বপ্নে ডুবে গিয়েছিল। ১০ নভেম্বর, সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিট—লালকেল্লা মেট্রোর গেট নম্বর ১-এর কাছে একটা হুন্ডাই আই-টোয়েন্টি হঠাৎ আগুনের গোলা হয়ে উড়ে গেল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ধোঁয়া, চিৎকার আর পোড়া মাংসের গন্ধ। পাশের গাড়িগুলো পুড়ে ছাই, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মানুষের দেহাংশ। প্রাথমিক হিসেবে ১৩ জন মারা গেছেন, আহত ২২-এর বেশি।
এলএনজেপি হাসপাতালে এখনও লড়াই চলছে জীবনের। পুরো এলাকা কর্ডন, মেট্রো স্টেশন বন্ধ, রাস্তায় শুধু পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। রাজধানীর হৃদয়ে যেন একটা গভীর ক্ষত।আর ঠিক সেই রাত পেরিয়ে, ১১ নভেম্বর সকালেই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পৌঁছে গেলেন থিম্পুতে। দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফর। বিমান থেকে নামতেই ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, রানি জেটসুন পেমা আর প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন।
‘দোষীদের রেয়াত করা হবে না’, লালকেল্লা বিস্ফোরণ নিয়ে দৃঢ় বার্তা রাজনাথের
আকাশে ভুটানের ড্রাগন পতাকা আর ভারতের তেরঙ্গা পাশাপাশি উড়ছে। পাহাড়ি বাতাসে মিশে গেল গার্ড অফ অনারের ব্যান্ড। কিন্তু দিল্লির আহত শহরের কথা কি প্রধানমন্ত্রীর মনে ঝড় তুলছে? সফরের আগে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘কঠোর ব্যবস্থা নিন’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সকালে ঘটনাস্থল দেখে এসেছেন, আহতদের হাসপাতালে। কিন্তু রাষ্ট্রকর্ম থেমে থাকে না।থিম্পুতে প্রধানমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য গ্লোবাল পিস প্রেয়ার ফেস্টিভাল। ভুটানের রাজকীয় সরকার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা, ধর্মগুরু, শান্তিদূতরা জড়ো হবেন।
থিম্পুর বিশাল স্টেডিয়ামে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মন্ত্রোচ্চারণ করবেন, হাজার হাজার প্রদীপ জ্বলবে শান্তির প্রতীক হয়ে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সেখানে ভাষণ দেবেন। বলবেন, “শান্তি কোনো দুর্বলতা নয়, এটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।” কিন্তু দিল্লির রক্তাক্ত রাতের ছায়া কি সেই ভাষণে পড়বে? ভুটানের রাজা বলেছেন, “আমরা ভারতের দুঃখে পাশে আছি।” থিম্পুর রাস্তায় ভারতীয় পতাকা উড়ছে, কিন্তু দিল্লির রাস্তায় এখনও পোড়া গাড়ির ধোঁয়া।এই দুই ছবি যেন একই দিনের দুই মুখ।
একদিকে রাজধানীতে সন্ত্রাসের আগুন, অন্যদিকে পাহাড়ি রাজ্যে শান্তির প্রদীপ। দিল্লিতে এনআইএ, এনএসজি, আইবি সবাই তদন্তে নেমেছে। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ডেটোনেটর, আইইডি। প্রধান সন্দেহভাজন ডা. উমর মহম্মদ পুলওয়ামার চিকিৎসক। তার মা, দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ফরিদাবাদ থেকে ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার। আর থিম্পুতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে লড়ব।”
ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শুধু প্রতিবেশী নয়, আত্মার। হাইড্রোপাওয়ার, ডিজিটাল পেমেন্ট, শিক্ষা সব ক্ষেত্রে নতুন চুক্তি হবে। কিন্তু দিল্লির আহত মায়েরা কি শুনছেন এই কথা?সকালে থিম্পুতে প্রধানমন্ত্রী ভুটানের রাজপ্রাসাদে গেলেন। রাজা-রানির সঙ্গে বৈঠক। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে যুবকদের সঙ্গে মতবিনিময়। বললেন, “ভারত-ভুটানের বন্ধুত্ব যুবকদের হাতে।” কিন্তু দিল্লিতে যে যুবকরা হাসপাতালে লড়ছে, তাদের কথা কে বলবে?
তবে বিরোধীদের গলায় উল্টো সুর। তাদের মতে গতকাল রাতে রাজধানীতে এত বড় বিস্ফোরণ হয়েছে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী কিভাবে ভুটানের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। যেখানে নিজের দেশে অশান্তি সেখানে সেই দেশের মানুষকে ছেড়ে কি করে তিনি অন্য দেশের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে গেলেন এমনটাও বলেছেন অনেকে।


