রাজধানী দিল্লির হজ কাজি এলাকায় এক নারকীয় ঘটনার সাক্ষী হল শহরবাসী। অভিযোগ, এক ৩৯ বছর বয়সী যুবক তাঁর ৬৫ বছরের মাকে দু’বার ধর্ষণ করেছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মহিলার অতীত জীবনের একটি সম্পর্ক, যাকে কেন্দ্র করে ছেলে তাঁকে ‘শাস্তি’ দেওয়ার নামে এই নৃশংস অপরাধ করেছে। খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমাজে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এবং তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
অভিযুক্ত ছেলের হাতে মায়ের উপর অমানবিক অত্যাচার
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভুক্তভোগী মহিলা নিজের ২৫ বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী, এবং তাঁরা একসঙ্গে হজ কাজি এলাকায় থাকতেন। তাঁর আরও এক মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে থাকেন।
ঘটনার শুরু গত ১৭ জুলাই। ওই দিন মহিলা তাঁর স্বামী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবে হজ পালনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ঠিক সেই সময় থেকেই ছেলে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। অভিযোগ, সে ফোনে বাবাকে মায়ের বিরুদ্ধে উসকানি দেয় এবং মাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। তার দাবি ছিল, বহু বছর আগে মায়ের এক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল, যা সে মেনে নিতে রাজি নয়।
দেশে ফেরার পর নরকযন্ত্রণা
১ অগাস্ট দেশে ফেরেন মহিলা। সেই রাতেই অভিযুক্ত ছেলে মাকে ঘরে বন্দি করে প্রথমে অকথ্য গালিগালাজ শুরু করে। মহিলার অভিযোগ, সে জোর করে তাঁর বোরখা খুলে ফেলে এবং বলে, মায়ের অতীতের সম্পর্কের কারণে তার শৈশব ধ্বংস হয়েছে। এর পরেই ঘটে প্রথম ধর্ষণের ঘটনা। আতঙ্কিত মহিলা এরপর বড় মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
কিন্তু ১১ অগাস্ট ফের তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। কয়েকদিন শান্তিপূর্ণভাবে কেটেও যায়। কিন্তু ১৪ অগাস্ট রাত সাড়ে ন’টায় ছেলে আবারও তাঁকে ডেকে নেয়। কথা বলার নামে ঘরে বন্দি করে প্রথমে মারধর করে এবং তারপর বলে, “তুমি অতীতে যে পাপ করেছ, তার শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।” এরপর ঘটে দ্বিতীয়বার ধর্ষণের ঘটনা।
থানায় অভিযোগ ও গ্রেফতার
এই ভয়ঙ্কর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে মহিলা তাঁর ছোট মেয়েকে সব কথা খুলে বলেন। মেয়ের সাহস ও সমর্থনে পরের দিন তিনি হজ কাজি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় (ধর্ষণ) মামলা রুজু হয়েছে। বর্তমানে সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পর গোটা এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে সমাজকর্মী—সবাই এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ঘরের ভেতরেই যদি একজন মা নিরাপদ না হন, তবে নারীরা আদৌ কোথায় নিরাপদ?
সমাজবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মত
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, এই ঘটনা কেবল একটি পারিবারিক অপরাধ নয়, বরং সমাজে নারীর অবস্থানের প্রতি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। নারীর অতীতের সম্পর্ক বা ব্যক্তিগত জীবনকে কেন্দ্র করে তাঁকে “শাস্তি” দেওয়ার মানসিকতা ভয়ঙ্করভাবে অমানবিক। বিশেষজ্ঞদের দাবি, পারিবারিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসারও অপরিহার্য।
নারী সুরক্ষার নতুন প্রশ্ন
দিল্লি, যেটি বারবার নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে, আবারও এক নয়া ঘটনায় আলোচনায় এসেছে। এই ঘটনার পর পুলিশ জানিয়েছে, তারা দ্রুত ও ন্যায়সংগত তদন্ত করবে। পাশাপাশি নারী সুরক্ষায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, পরিবার নামক নিরাপদ আশ্রয়ও কখনও কখনও নারীর জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। সমাজের দায়িত্ব শুধু অপরাধীকে শাস্তি দেওয়াই নয়, বরং নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষা, সচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ—এই তিনটি স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে গড়ে উঠতে পারে এক নিরাপদ সমাজ।