তৃণমূল কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখলেকে কড়া ভাষায় নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court)। প্রাক্তন কূটনীতিক লক্ষ্মী পুরীর দায়ের করা মানহানির মামলায় আদালতের আগের রায় অনুসারে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে বলেই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অনীশ দয়াল।
২০২১ সালে লক্ষ্মী পুরী একটি মানহানির মামলা দায়ের করেন সাকেত গোখলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার)-এ কয়েকটি পোস্টে গোখলে লক্ষ্মী পুরীর সুইজারল্যান্ডে সম্পত্তি কেনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ইঙ্গিত করেন, লক্ষ্মী ও তাঁর স্বামী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীর সম্পদের উৎস নিয়ে। এই বক্তব্যগুলিকে “অসত্য ও মানহানিকর” বলে অভিহিত করে আদালত।
২০২৪ সালের ১ জুলাই দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে জানায়, গোখলের পোস্টগুলি মানহানিকর এবং তা লক্ষ্মী পুরীর ব্যক্তিগত ও পেশাগত ভাবমূর্তিতে ব্যাপক আঘাত করেছে। এই প্রসঙ্গে আদালত উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’ নাটক থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে মর্যাদা ও সুনামের ক্ষতি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ব্যাখ্যা দেয়।
তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও গোখলে নির্ধারিত সময়ে ক্ষমা চাননি। ফলে লক্ষ্মী পুরী আদালতে অবমাননার মামলা (contempt petition) দায়ের করেন। এই মামলার শুনানিতে সাকেত গোখলে ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১৫ এপ্রিল আদালতে উপস্থিত হন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও শুনানির পর বিচারপতি অনীশ দয়াল বলেন, “গোখলের পোস্টগুলির মাধ্যমে লক্ষ্মী পুরীর মানহানি হয়েছে এবং তাতে তাঁর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।” সেইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দেয়—
গোখলেকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে লক্ষ্মী পুরীকে৷ তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে একটি নিঃশর্ত প্রকাশ্য ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করতে হবে, যা ছয় মাস ধরে দৃশ্যমান থাকবে৷ সেই ক্ষমা চাওয়ার বিজ্ঞাপন ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে৷ এবং ভবিষ্যতে কোনওভাবেই লক্ষ্মী পুরীর বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করা চলবে না।
এর পাশাপাশি, গোখলের মাসিক বেতন থেকে অর্থ আদায়ের জন্য আদালতের আরেকটি বেঞ্চ, বিচারপতি মনমীত প্রতিম সিং অরোরার নেতৃত্বে, ২০২৫ সালের ২৪ এপ্রিল তাঁর বেতন সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়।
এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। সেদিন গোখলের “ইচ্ছাকৃত অবমাননার” বিষয়ে বিস্তারিত যুক্তিতর্ক শোনা হবে বলে আদালত জানিয়েছে।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহল ও আইনি মহলে আলোচনার ঝড় উঠেছে। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এই ধরনের আইনি তিরস্কার এবং অর্থদণ্ড বিরল ঘটনা। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
দিল্লি হাইকোর্টের এই কড়া অবস্থান শুধু সুনামের গুরুত্ব নয়, সামাজিক মাধ্যমে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের পরিণতি সম্পর্কেও এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল।