গভীর চক্রান্ত, দাবি নোট কাণ্ডে অভিযুক্ত যশবন্ত ভার্মার

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মা (Yashwant Varma) দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন যে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ তাঁর সরকারি বাসভবনের একটি স্টোররুমে নগদ টাকা রেখেছিলেন, যেখান…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/varma.jpg

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মা (Yashwant Varma) দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন যে তিনি বা তাঁর পরিবারের কেউ তাঁর সরকারি বাসভবনের একটি স্টোররুমে নগদ টাকা রেখেছিলেন, যেখান থেকে গত ১৪ মার্চ রাতে আগুন লাগার পর জ্বলন্ত নোটের অবশেষ উদ্ধার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে তিনি “ষড়যন্ত্রে ফাঁসানো এবং কলঙ্কিত করার প্রচেষ্টা” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিচারপতি বর্মা দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবেন্দ্র কুমার উপাধ্যায়কে দেওয়া একটি দীর্ঘ জবাবে জানিয়েছেন, ওই স্টোররুমটি তাঁর মূল বাসস্থান থেকে বিচ্ছিন্ন এবং এটি অনেকের দ্বারা ব্যবহৃত ও প্রবেশযোগ্য। এই ঘটনার পর ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং বিচারপতি বর্মাকে আপাতত কোনও বিচারিক কাজে নিয়োজিত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ: স্টোররুমে আগুন ও নগদ টাকার অভিযোগ

   

বিচারপতি বর্মা জানিয়েছেন, গত ১৪ মার্চ রাতে, যা ছিল হোলির দিন, তাঁর সরকারি বাসভবনের কর্মচারী কোয়ার্টারের কাছে একটি স্টোররুমে আগুন লাগে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সেদিন মধ্যপ্রদেশে ছিলেন, এবং বাড়িতে শুধু তাঁর মেয়ে ও বৃদ্ধা মা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “এই ঘরটি সাধারণত সবাই ব্যবহার করতেন—অব্যবহৃত আসবাবপত্র, বোতল, ক্রকারি, গদি, পুরনো কার্পেট, স্পিকার, বাগানের সরঞ্জাম এবং সিপিডব্লিউডি (কেন্দ্রীয় গণপূর্ত বিভাগ)-র সামগ্রী রাখার জন্য। এই ঘরটি তালাবিহীন এবং সামনের প্রধান ফটক ও কর্মচারী কোয়ার্টারের পিছনের দরজা দিয়ে প্রবেশযোগ্য। এটি আমার মূল বাসভবনের অংশ নয়, যেমনটি প্রচার করা হয়েছে।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার সময় মধ্যরাতে তাঁর মেয়ে এবং ব্যক্তিগত সচিব অগ্নিনির্বাপক দলকে খবর দেন। আগুন নেভানোর সময় নিরাপত্তার কারণে পরিবারের সদস্যদের এবং কর্মীদের ঘটনাস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন নিভে যাওয়ার পর যখন তারা ফিরে আসে, তখন কোনও নগদ টাকা বা জ্বলন্ত নোট দেখতে পাননি। বিচারপতি বর্মা জোর দিয়ে বলেন, “আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমি বা আমার পরিবারের কেউ কখনও ওই স্টোররুমে নগদ টাকা রাখিনি। এই অভিযোগ যে ওই টাকা আমাদের, তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং হাস্যকর।”
বিচারপতির দাবি

বিচারপতি বর্মা জানান, তিনি ১৫ মার্চ ভোপাল থেকে ইন্ডিগোর একটি ফ্লাইটে স্ত্রী-সহ দিল্লি ফিরে আসেন। ফিরে এসে প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায়ের ফোন পান, যিনি তাঁকে বাসভবনে আগুন লাগার ঘটনা এবং সম্ভাব্য দুর্ঘটনার কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি তখনও জানতাম না যে এটি কেবল শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন নয়। পরে প্রধান বিচারপতির প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি (পিপিএস) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। আমি, আমার ব্যক্তিগত সচিব এবং পিপিএস যখন জ্বলন্ত ঘরটি পরীক্ষা করি, তখন কোনও নগদ টাকা বা জ্বলন্ত নোট দেখিনি।”

তবে, পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আপলোড করা কিছু ছবি ও ভিডিওতে স্টোররুমে নগদ টাকার উপস্থিতি দেখানো হয়। এ বিষয়ে বিচারপতি বর্মা বলেন, “১৬ মার্চ সকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করি এবং পুলিশ কমিশনারের দেওয়া ভিডিও দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। আমি যখন ঘটনাস্থল দেখেছিলাম, তখন এমন কিছু ছিল না। এটি আমাকে ফাঁসানোর এবং কলঙ্কিত করার একটি ষড়যন্ত্র।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ছড়ানো মিথ্যা অভিযোগের সঙ্গে এটি যুক্ত।
পরিবারের আর্থিক লেনদেন: ব্যাঙ্কিং চ্যানেলের উল্লেখ

বিচারপতি বর্মা জোর দিয়ে বলেন, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের নগদ উত্তোলন সবসময় নিয়মিত ব্যাঙ্কিং চ্যানেল, ইউপিআই অ্যাপ্লিকেশন এবং কার্ডের মাধ্যমে হয়। তিনি বলেন, “আমার বাড়ির কেউ কখনও জ্বলন্ত নোট বা টাকা দেখেনি। আগুন নেভানোর পর যখন স্থানটি আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তখনও কোনও টাকা দেখা যায়নি বা জব্দ করা হয়নি।” তিনি ভিডিওটির বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “ধরে নিলাম ভিডিওটি ঘটনার সময়ে তোলা হয়েছিল, তবে কিছুই জব্দ করা হয়নি। আমার কর্মীদের কাউকে কোনও টাকা দেখানো হয়নি।”

আরো দেখুন কলকাতায় কেএমসি ১০০ দিনের কর্মীদের বেতনে দেরি, দুঃখপ্রকাশ মেয়রের

সুনাম ও চরিত্রের উপর আঘাত

বিচারপতি বর্মা প্রধান বিচারপতি উপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, তাঁকে এই “ভিত্তিহীন অভিযোগ” থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। তিনি বলেন, “একজন বিচারপতির জীবনে সুনাম ও চরিত্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। এই ঘটনা আমার দশকেরও বেশি সময়ের সুনামে দাগ ফেলেছে। আমি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিচারপতি হিসেবে কাজ করেছি, কখনও আমার সততার উপর প্রশ্ন ওঠেনি। আমি কৃতজ্ঞ হব যদি আমার বিচারিক কার্যকলাপ এবং আইনি সম্প্রদায়ের মধ্যে আমার সততার উপর একটি তদন্ত করা হয়।”
সুপ্রিম কোর্টের পদক্ষেপ

এই ঘটনার পর ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না শনিবার একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। এই কমিটির সদস্যরা হলেন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শীল নাগু, হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জি এস সন্ধাওয়ালিয়া এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের বিচারপতি অনু শিবরামন। দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপাতত বিচারপতি বর্মাকে কোনও বিচারিক কাজে নিয়োজিত না করতে।

বিচারপতি যশবন্ত বর্মার এই ঘটনা বিচার বিভাগের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি এই অভিযোগকে একটি “ষড়যন্ত্র” হিসেবে দেখছেন এবং তাঁর সততা ও সুনাম রক্ষার জন্য তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটি এখন এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করবে, যা ভারতীয় বিচারব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।