ভোপাল: মধ্যপ্রদেশের সিওনি জেলায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্যের পুলিশ সার্কেল অফিসার (CSP) পূজা পাণ্ডে এবং তাঁর অধীনে কর্মরত ১১ জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে লুটপাট, অপহরণ ও হাওয়ালা কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ এতটাই গুরুতর যে, তাঁদের সবাইকে আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং পূজা পাণ্ডে-সহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ডকাতির মামলা রুজু হয়েছে।
ঘটনাটি শুরু হয় ৮-৯ অক্টোবর রাতে। সিওনি জেলার পুলিশ কর্মকর্তা পূজা পাণ্ডে একটি গোপন সূত্র থেকে খবর পান যে, কাটনি জেলা থেকে একদল হাওয়ালা ব্যবসায়ী বিপুল অর্থ নিয়ে মহারাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
ফের হরিয়ানায় পুলিশকর্মীর আত্মহত্যা! বিস্ফোরক চিঠিতে আইপিএস মৃত্যুকাণ্ডে নয়া মোড়
খবর পাওয়ার পরেই তিনি বন্ডোল থানার টিআই (থানা ইনচার্জ)কে নির্দেশ দেন গাড়িটিকে নজরে রাখার জন্য। কিছুক্ষণ পর, লখনওয়াড়া থানার সীমান্তবর্তী হাইওয়েতে পূজা পাণ্ডে স্বয়ং উপস্থিত হন, সঙ্গে কয়েকজন কনস্টেবলও ছিলেন। পরে বন্ডোল থানার টিআইও সেখানে এসে পৌঁছান।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই সময় হাওয়ালা ব্যবসায়ীদের ক্রেটা গাড়ি আটকানো হয় এবং তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ₹২.৯৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। তবে সেই টাকা থানার রেজিস্টারে জমা না পড়ে, উল্টে তা লোপাট হয়ে যায়। পরদিন সকালে আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা সিওনি থানায় পৌঁছে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। কিন্তু যেহেতু থানাটি পূজা পাণ্ডের অধীনস্থ, তাই বিষয়টি তাঁর দফতরে গিয়ে ঠেকে।
এরপর যা ঘটেছে তা আরও অবাক করার মতো। পূজা পাণ্ডে নাকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ৫০-৫০ ভাগে সমঝোতা করেন। ₹২.৯৬ কোটির অর্ধেক, অর্থাৎ ₹১.৪৮ কোটি টাকা পুলিশ রেখে দেয়, আর বাকিটা ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে মাঝপথে, যখন ব্যবসায়ীরা টাকাগুলি গুনে দেখে ₹২৫ লক্ষ কম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারা ফের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাদের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা সরাসরি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। এই অভিযোগের পরেই গোটা পুলিশ প্রশাসনে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। জেলা পুলিশ সুপার ছুটিতে থাকায়, আইজিপি (IG) প্রমোদ বর্মা সরাসরি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করেন।
আইজিপি বর্মা সঙ্গে সঙ্গেই সিওনির সিএসপি পূজা পাণ্ডে, বন্ডোল থানার টিআই অর্পিত ভৈরব ও আরও ৯ জন পুলিশ সদস্যকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জবলপুরের এএসপি জিতেন্দ্র সিংকে।
পরবর্তীতে, ১৩ অক্টোবর আইজিপি প্রমোদ বর্মা নিজে সিওনি গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন এবং দেখতে পান যে হাওয়ালা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলায়ও অনিয়ম রয়েছে। এরপরে তিনি স্থানীয় পুলিশকে তদন্ত থেকে সরিয়ে দেন এবং পুরো তদন্ত জবলপুর পুলিশের হাতে তুলে দেন।
শেষ পর্যন্ত ১১ জন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে ডকাতি, অপহরণ ও দুর্নীতির ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পূজা পাণ্ডে এবং কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে, যদিও ৬ জন এখনও পলাতক।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশের ইতিহাসে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা—যেখানে এক মহিলা সিএসপি-সহ গোটা টিমকেই পুলিশের হাতেই গ্রেফতার হতে হয়েছে। প্রশাসনিক মহলে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে—“আইনের রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়ে যায়, তবে নাগরিকরা নিরাপত্তা পাবে কোথায়?”