পাক-মহিলার সঙ্গে বিবাহ গোপন করায় বরখাস্ত সিআরপিএফ জওয়ান

কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF) শনিবার এক কনস্টেবলকে পাকিস্তানি মহিলার সঙ্গে বিবাহের তথ্য গোপন করার অভিযোগে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করেছে। মুনির আহমেদ নামে এই…

CRPF Constable Dismissed for Hiding Marriage to Pakistani Woman

কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী (CRPF) শনিবার এক কনস্টেবলকে পাকিস্তানি মহিলার সঙ্গে বিবাহের তথ্য গোপন করার অভিযোগে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করেছে। মুনির আহমেদ নামে এই কনস্টেবলের কাজকে সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষ সেবা আচরণবিধির লঙ্ঘন এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেছে। এই ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সীমান্ত নীতির সংবেদনশীলতার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।

ঘটনার বিবরণ

মুনির আহমেদ, যিনি সিআরপিএফের ৪১তম ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সিয়ালকোটের মেনাল খান নামে এক মহিলার সঙ্গে বিবাহ করেছিলেন। তিনি এই বিবাহের তথ্য তার বিভাগের কাছে প্রকাশ করেননি এবং মেনালের ভারতে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। সিআরপিএফের মুখপাত্র ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) এম ধিনাকরণ বলেন, “মুনির আহমেদ পাকিস্তানি নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ গোপন করেছেন এবং জেনেশুনে তার মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসার পরেও তাকে ভারতে রেখেছেন। তার এই কাজ সেবা আচরণবিধির লঙ্ঘন এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর।”

   

সিআরপিএফের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দেখা গেছে, মুনির ২০২৩ সালে মেনাল খানের সঙ্গে বিবাহের জন্য অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর জোনের সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষ নীতিগত উদ্বেগ এবং সীমান্ত সম্পর্কের সংবেদনশীলতার কারণে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) প্রদানের বিরুদ্ধে সুপারিশ করেছিল। এরপরও মুনির বিবাহ সম্পন্ন করেন এবং বিভাগকে এই বিষয়ে কোনো তথ্য না দিয়ে মেনালকে ভারতে রাখেন।

জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন

মুনিরের এই কাজকে সিআরপিএফ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সংবেদনশীল প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে সিআরপিএফের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বিবাহের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম রয়েছে। সিআরপিএফের নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের বিবাহের জন্য বিভাগের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন। মুনির এই নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন এবং তার স্ত্রীর ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার বিষয়টিও গোপন করেছেন।

সিআরপিএফের তদন্তে আরও জানা গেছে যে, মুনির এবং মেনালের বিবাহ অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছিল, যা আইনি এবং প্রক্রিয়াগত বৈধতার ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। মেনাল ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যটক ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেন, যার মেয়াদ ২২ মার্চ শেষ হয়। এরপরও তিনি ভারতে অবস্থান করেন, যা সিআরপিএফের তদন্তে প্রকাশ পায়।

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা এবং ভিসা নীতি

এই ঘটনাটি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এই অঞ্চলের সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলির মধ্যে একটি। পুলওয়ামায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। পহেলগাঁও হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করে এবং তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, ২৪ এপ্রিল থেকে ছয় দিনের মধ্যে ৭৮৬ জন পাকিস্তানি নাগরিক অটারি সীমান্ত দিয়ে ভারত ত্যাগ করেছেন।

মেনাল খানও এই নির্দেশের আওতায় অটারি-ওয়াঘা সীমান্তে নির্বাসনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে, জম্মু ও কাশ্মীর হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে তাকে শেষ মুহূর্তে নির্বাসন থেকে রক্ষা করা হয়। মেনালের আইনজীবী এবং বিজেপি মুখপাত্র অঙ্কুর শর্মা জানান, মেনাল ভারতীয় নাগরিকের স্ত্রী হিসেবে দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য যোগ্য এবং তিনি ইতিমধ্যে এলটিভির জন্য আবেদন করেছেন। হাইকোর্ট মেনালের নির্বাসন স্থগিত না করলেও, তার ভিসার স্থিতি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তাকে জম্মুতে থাকার অনুমতি দেয়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগ

এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং কিছু ব্যবহারকারী এটিকে “বিবাহের ফাঁদ” বা গুপ্তচরবৃত্তির সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সিআরপিএফ জওয়ানের পাকিস্তানি মহিলার সঙ্গে বিবাহের বিষয়টি গুরুতর। এনআইএ তদন্তের প্রয়োজন।” এই ঘটনা সীমান্তের ওপারে রোমান্টিক সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা বলিউডের ‘হেনা’ (১৯৯১) এবং ‘বীর-জারা’ (২০০৪) এর মতো চলচ্চিত্রে উদযাপিত হলেও, বাস্তবে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে।

সিআরপিএফের পদক্ষেপ

সিআরপিএফ মুনির আহমেদের বিরুদ্ধে সিসিএস (কন্ডাক্ট) রুলস, ১৯৬৪-এর ২১(৩) ধারার অধীনে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সিআরপিএফের জম্মু ও কাশ্মীর জোনের সুপারিশ এবং অভ্যন্তরীণ তদন্তের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মুনির আহমেদের চাকরি থেকে বরখাস্তের ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা এবং জাতীয় নিরাপত্তার সংবেদনশীলতার একটি উদাহরণ। সিআরপিএফের এই পদক্ষেপ শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নীতির প্রতি তাদের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানি নাগরিকদের নির্বাসন এবং মেনাল খানের মতো ব্যক্তিদের ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা এই ঘটনাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিলেও, এটি সরকারি নীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সতর্কতার গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।