নির্বাচনী বন্ডে ‘নেই’ CPIM, মোদী-মমতার বিপুল ভোট খরচের উৎস জানা যাবে

দেশে একমাত্র দল হিসেবে CPIM সরাসরি দাবি করেছিল নির্বাচনের বন্ড (Electoral Bond) তারা নেয় না। দলটির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, দ্রুত গোপন আর্থিক অনুদানের…

দেশে একমাত্র দল হিসেবে CPIM সরাসরি দাবি করেছিল নির্বাচনের বন্ড (Electoral Bond) তারা নেয় না। দলটির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, দ্রুত গোপন আর্থিক অনুদানের উৎস জানাতে হবে। নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, মঙ্গলবারের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে হবে।

চাঞ্চল্যকর সপ্রিম নির্দেশের পরেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র শোরগোল। কারণ, নির্বাচনের খরচ তুলতে নাম পরিচয় গোপন করে বিপুল টাকা সংগ্রহ করা হয় তাতে একমাত্র সিপিআইএম নেই। দলটি কেরলে ক্ষমতাসীন আর ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধীদল। তামিলনাড়ুতে সরকারের শরিক। একাধিক রাজ্যে আছেন দলটির বিধায়করা।

নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবাধিক’ আখ্যা দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।  গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে নির্বাচনী বন্ডকে ‘অসাংবিধানিক’ ঘোষণা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট জানায়, রাজনৈতিক দলগুলিতে ইলেকটোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান দেওয়া যাবে না। নির্বাচনী বন্ড কিনে যারা রাজনৈতিক অনুদান দিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন দল কত টাকা পেয়েছে, তাও জানাতে বলেন প্রধান বিচারপতি। সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় স্টেট ব্যাঙ্ককে।

সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে এসবিআই কর্তৃপক্ষ সময় চেয়েছিল। নির্বাচনী বন্ড দাতাদের নাম ফাঁস করতে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছিল স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। দেখা যায়, তাদের দাবি করা সময় লোকসভা ভোটের পর। তীব্র প্রতিবাদ জানায় সিপিআইএম। প্রতিবাদের জেরে রাজনৈতিক মহল আলোড়িত হয়। মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ড দাতাদের তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

নির্বাচনী বন্ড:
পরিচয় ও অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল।  এটাই নির্বাচনী বন্ডে। সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। নিয়ম ছিল কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবে। সেই অর্থ ভাঙিয়ে নেবে রাজনৈতিক দলগুলি। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদী সরকার। তবে একই সঙ্গে ওই বন্ডে দাতাদের পরিচয় এবং দানের অর্থের পরিমাণ গোপন রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা।  অভিযোগ ওঠে, নির্বাচনী বন্ডের নামে বিপুল পরিমাণ কালো টাকার লেনদেন হয়েছে। সিপিআইএম সরাসরি আইনি যুদ্ধে নামে।

নির্বাচনী বন্ড বা ভোটের সময় নাম গোপন রেখে বিপুল টাকার অনুদান ইস্যুতে সিপিআইএমের অবস্থান তাদের সর্বভারতীয় ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে আগেই। এতে বলা হয়েছে, “ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)- পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে: মিডিয়ার কিছু অংশে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে সিপিআইএম নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অবদান হিসাবে বিভিন্ন পরিমাণ পেয়েছে। দলটি স্পষ্ট করতে চায় যে এই প্রতিবেদনগুলি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আসল বিষয়টি হল সিপিআইএম নীতিগতভাবে নির্বাচনী বন্ড গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। এই কারণেই এটি নির্বাচনী বন্ড গ্রহণ করার জন্য আইন দ্বারা প্রয়োজনীয় হিসাবে একটি মনোনীত স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেনি। এই মৌলিক বিরোধিতার কারণে সিপিআইএমনির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে।”

সিপিআইএমের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর SBI নির্বাচনী বন্ডদাতাদের নাম জানালেই স্পষ্ট হবে বিজেপি, তৃ়নমূল, ও কংগ্রেস সহ  বিভিন্ন দলগুলির ভোটে টাকার যোগান কারা দেয়।